এস.এম. জামাল উদ্দিন: সংবাদপত্র জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম শফিকুল ইসলাম ইউনুস। ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি ইন বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার ৪৭, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঢাকা বেশ সুনামের সঙ্গে প্রকাশনা জগতে তোলপাড় করা কাগজ হিসেবে নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছিল।

শুরুতে সাপ্তাহিক আলোচিত সংবাদপত্র হিসাবে সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের দিক নির্দেশনামূলক লেখা, প্রবন্ধ- নিবন্ধ, কবিতা, ছড়া প্রকাশ করাই ছিল পত্রিকা সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস সাহেবের ব্রত। প্রগতিশীল জাতীয় সংবাদপত্র ‘ঢাকা’তে নিয়মিত ‘রাজাকারের ডায়েরী’ ছদ্মনামে কলাম লেখা হত। পাঠক আগ্রহভরে ঐসব লেখা পড়তো। সাপ্তাহিক ঢাকা কাগজে যারা কলম সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাঁরা বর্তমানে অনেক নামি দামি সংবাদপত্রের নামকরা সাংবাদিক।

সফিকুল ইসলাম ইউনুস ছিলেন ঐ সকল তারুণ্যের প্রতীক। তৃণমূল থেকে উঠে আসার জন্যে বহু সাংবাদিকদের সিঁড়ি হিসেবে খ্যাত সাপ্তাহিক ঢাকা থেকে আজকের দৈনিক ঢাকা। ত্যাগী ও কল্যাণকামী সম্পাদক ছিলেন ঢাকা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর প্রকৃতির স্পষ্টভাষী সম্পাদক ছিলেন সফিকুল ইসলাম ইউনুস। বাড়ী তাঁর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণার নির্জন গ্রামে।

সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের সঙ্গে বহু স্মৃতিকথা আজ বার বার মনে পড়ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের অত্যন্ত নিকটজন হিসেবে মনে স্থান করে নিতে পেরেছিলাম। সাপ্তাহিক ঢাকা ও দৈনিক ঢাকা পত্রিকার চট্টগ্রাম সংবাদদাতা বা চট্টগ্রামে-ব্যুরো প্রধান হিসেবে তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত দৈনিক ঢাকার সাংবাদিক ছিলাম বলেই সেই সুবাদে তাঁর ৪৭ দিলকুশা বা/এ, ঢাকাতে যাওয়া হতো। জামান চেম্বারের ৭ম তলায় দৈনিক ঢাকা অফিস বা কার্যালয়।

ইউনুস ভাই কথায় কথায় বলতেন, ‘আমি আপনাদের মত সাংবাদিক নই জামাল সাহেব- আমি শুরু থেকেই সম্পাদক। তিনি একথাটি গর্ব করে বলতেন। আমি প্রথম থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন সময় থেকে আজ অবধি একজন নীতিবান সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস’।

প্রতিদিন ইউনুস ভাই বিকেলে বেশ কয়েক মাইল হাঁটাহাঁটি করতেন। দিলকুশা থেকে স্টেডিয়াম হয়ে সচিবালয় আবদুল গণী রোড দিয়ে হাইকোর্ট দোয়েল চত্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে পুনরায় দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকাস্থ ৭ম তলার তাঁর নিজস্ব দৈনিক ঢাকা কার্যালয়ে আসতেন। দিলকুশা থেকে শুরু করে ‘বঙ্গভবন’ এর সামনের রাস্তা ধরে ফুলবাড়িয়া বাসস্টেশন হয়ে টিকাটুলি আর.কে. মিশন রোড, মতিঝিল হয়ে পুনরায় দিলকুশা রীতিমত বৈকালিক ভ্রমণে বের হতেন ইউনুস ভাই। নিয়মের বাইরে চলাফেরা করতেন না।

প্রকৃত কর্মঠ একজন সুদক্ষ সংবাদপত্রসেবী সাংবাদিক-সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস জাতীয় প্রেস ক্লাব এর স্থায়ী সদস্য ছিলেন এবং বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন। বহু স্মৃতিময় ঘটনার নিরব সাক্ষী হিসেবে একটি চমৎকার উদাহরণ দিতে পারি।

তিনি ঢাকায় দূর্ঘটনার শিকার হলেন। মারাত্মক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেত্রকোণা নিজগ্রামে জীবনের শেষ ক’দিন বসবাস করেন তিনি। তাঁকে দেখার জন্য একদিন মনস্থির করলাম ময়মনসিংহ নেত্রকোণা যাব। সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত সাকিবুল ইসলাম শাওন। ইউনুস ভাই অধির আগ্রহ নিয়ে আশা করেছিলেন আমার যাত্রার প্রতি। কিন্তু ঢাকায় অহেতুক ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়নি আমার। কিভাবে যাব কোথা হ’তে গাড়ীতে যাব তা তিনি বিস্তারিত আমাকে বলেছিলেন। যাব যাব করে আর ইহজীবনে যাওয়া হয়নি নেত্রকোণা সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের সন্ধানে।

গত পহেলা জুন (২০২২) বুধবার সকালে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দিন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে মোবাইলে আলাপকালে জানা গেল ইউনুস সাহেবের মৃত্যুর সংবাদ।

জাফর ওয়াজেদ সাহেব বললেন; জামাল উদ্দিন শুনেছেন ! সফিকুল ইসলাম ইউনুস ইন্তেকাল করেছেন গতকাল ৩১ মে ২০২২ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একেত দূর্ঘটনা কবলিত গ্রামের বাড়ীতে চিকিৎসাধীন ক’দিন যাবৎ। পরবর্তীতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নাল্লিাহ ওয়াইন্না ইলাহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৬৭ বছর।

প্রচন্ড একটা ধাক্কা সামাল দিতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। নিজেকে ‘নার্ভাস’ মনে হলো। কিসের জন্য মানুষ এতে আশা আকাংখা নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন, তা একমাত্র মহান আল্লাহপাক ভালো জানেন। পরিশেষে একজন পেশাদার সাংবাদিক-সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ পাক সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইকে পবিত্র জান্নাতবাসী করুন, দোয়া করি-আমীন। লেখকঃ এস.এম. জামাল উদ্দিন,সাংবাদিক

এস.এম. জামাল উদ্দিন: সংবাদপত্র জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম শফিকুল ইসলাম ইউনুস। ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি ইন বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার ৪৭, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঢাকা বেশ সুনামের সঙ্গে প্রকাশনা জগতে তোলপাড় করা কাগজ হিসেবে নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছিল।

শুরুতে সাপ্তাহিক আলোচিত সংবাদপত্র হিসাবে সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের দিক নির্দেশনামূলক লেখা, প্রবন্ধ- নিবন্ধ, কবিতা, ছড়া প্রকাশ করাই ছিল পত্রিকা সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস সাহেবের ব্রত। প্রগতিশীল জাতীয় সংবাদপত্র ‘ঢাকা’তে নিয়মিত ‘রাজাকারের ডায়েরী’ ছদ্মনামে কলাম লেখা হত। পাঠক আগ্রহভরে ঐসব লেখা পড়তো। সাপ্তাহিক ঢাকা কাগজে যারা কলম সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাঁরা বর্তমানে অনেক নামি দামি সংবাদপত্রের নামকরা সাংবাদিক।

সফিকুল ইসলাম ইউনুস ছিলেন ঐ সকল তারুণ্যের প্রতীক। তৃণমূল থেকে উঠে আসার জন্যে বহু সাংবাদিকদের সিঁড়ি হিসেবে খ্যাত সাপ্তাহিক ঢাকা থেকে আজকের দৈনিক ঢাকা। ত্যাগী ও কল্যাণকামী সম্পাদক ছিলেন ঢাকা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর প্রকৃতির স্পষ্টভাষী সম্পাদক ছিলেন সফিকুল ইসলাম ইউনুস। বাড়ী তাঁর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণার নির্জন গ্রামে।

সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের সঙ্গে বহু স্মৃতিকথা আজ বার বার মনে পড়ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের অত্যন্ত নিকটজন হিসেবে মনে স্থান করে নিতে পেরেছিলাম। সাপ্তাহিক ঢাকা ও দৈনিক ঢাকা পত্রিকার চট্টগ্রাম সংবাদদাতা বা চট্টগ্রামে-ব্যুরো প্রধান হিসেবে তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত দৈনিক ঢাকার সাংবাদিক ছিলাম বলেই সেই সুবাদে তাঁর ৪৭ দিলকুশা বা/এ, ঢাকাতে যাওয়া হতো। জামান চেম্বারের ৭ম তলায় দৈনিক ঢাকা অফিস বা কার্যালয়।

ইউনুস ভাই কথায় কথায় বলতেন, ‘আমি আপনাদের মত সাংবাদিক নই জামাল সাহেব- আমি শুরু থেকেই সম্পাদক। তিনি একথাটি গর্ব করে বলতেন। আমি প্রথম থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন সময় থেকে আজ অবধি একজন নীতিবান সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস’।

প্রতিদিন ইউনুস ভাই বিকেলে বেশ কয়েক মাইল হাঁটাহাঁটি করতেন। দিলকুশা থেকে স্টেডিয়াম হয়ে সচিবালয় আবদুল গণী রোড দিয়ে হাইকোর্ট দোয়েল চত্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে পুনরায় দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকাস্থ ৭ম তলার তাঁর নিজস্ব দৈনিক ঢাকা কার্যালয়ে আসতেন। দিলকুশা থেকে শুরু করে ‘বঙ্গভবন’ এর সামনের রাস্তা ধরে ফুলবাড়িয়া বাসস্টেশন হয়ে টিকাটুলি আর.কে. মিশন রোড, মতিঝিল হয়ে পুনরায় দিলকুশা রীতিমত বৈকালিক ভ্রমণে বের হতেন ইউনুস ভাই। নিয়মের বাইরে চলাফেরা করতেন না।

প্রকৃত কর্মঠ একজন সুদক্ষ সংবাদপত্রসেবী সাংবাদিক-সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস জাতীয় প্রেস ক্লাব এর স্থায়ী সদস্য ছিলেন এবং বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন। বহু স্মৃতিময় ঘটনার নিরব সাক্ষী হিসেবে একটি চমৎকার উদাহরণ দিতে পারি।

তিনি ঢাকায় দূর্ঘটনার শিকার হলেন। মারাত্মক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেত্রকোণা নিজগ্রামে জীবনের শেষ ক’দিন বসবাস করেন তিনি। তাঁকে দেখার জন্য একদিন মনস্থির করলাম ময়মনসিংহ নেত্রকোণা যাব। সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত সাকিবুল ইসলাম শাওন। ইউনুস ভাই অধির আগ্রহ নিয়ে আশা করেছিলেন আমার যাত্রার প্রতি। কিন্তু ঢাকায় অহেতুক ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়নি আমার। কিভাবে যাব কোথা হ’তে গাড়ীতে যাব তা তিনি বিস্তারিত আমাকে বলেছিলেন। যাব যাব করে আর ইহজীবনে যাওয়া হয়নি নেত্রকোণা সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের সন্ধানে।

গত পহেলা জুন (২০২২) বুধবার সকালে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দিন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে মোবাইলে আলাপকালে জানা গেল ইউনুস সাহেবের মৃত্যুর সংবাদ।

জাফর ওয়াজেদ সাহেব বললেন; জামাল উদ্দিন শুনেছেন ! সফিকুল ইসলাম ইউনুস ইন্তেকাল করেছেন গতকাল ৩১ মে ২০২২ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একেত দূর্ঘটনা কবলিত গ্রামের বাড়ীতে চিকিৎসাধীন ক’দিন যাবৎ। পরবর্তীতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নাল্লিাহ ওয়াইন্না ইলাহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৬৭ বছর।

প্রচন্ড একটা ধাক্কা সামাল দিতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। নিজেকে ‘নার্ভাস’ মনে হলো। কিসের জন্য মানুষ এতে আশা আকাংখা নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন, তা একমাত্র মহান আল্লাহপাক ভালো জানেন। পরিশেষে একজন পেশাদার সাংবাদিক-সম্পাদক সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ পাক সফিকুল ইসলাম ইউনুস ভাইকে পবিত্র জান্নাতবাসী করুন, দোয়া করি-আমীন। লেখকঃ এস.এম. জামাল উদ্দিন,সাংবাদিক