ঢাকা ব্যুরো: ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের সরকারের সাথে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান। ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা ব্যবহার করে আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, এ লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’ আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘এটা কোন কল্পকাহিনী না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আপনারা মনস্থির করে এগিয়ে এলে খুব দ্রুত গতিতে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।’সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করলে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা অব্যসম্ভাবী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘ আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশীদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনারা সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।’
তিনি বলেন, যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এ সুযোগ আর কখনো আসবে কি না জানিান। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পারিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে। দুনিয়ায় এমন কোন দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়তো কেই সরকারে আছেন, কেইবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আােছ। পারস্পারিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভুমিকা রাখতে পারে।
তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘যে কয়টা দিন সরকারে থাকি- আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের অঙ্গীকার হলো- নতুন বাংলাদেশের জন্য যা আছে তা করবো। যেন বলে যেতে পারি- এই দেশ আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।’ স্বৈরাচার হঠাতে ছাত্রদের এবারের আন্দোলন কোনো প্রথাগত আন্দোলন ছিল না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা সাধারণ কোনো আন্দোলন ছিল না। যারা শহিদ হয়েছেন, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অনেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছেন। তারা মনস্থির করেছিলো যে উদ্দেশে রাস্তায় নেমেছে- সে উদ্দেশে প্রাণ দিতে তারা তৈরি আছে। রাস্তায় নেমেছে তাতে প্রাণ গেলে যবে, কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সে লক্ষ্য অর্জন করবেই করবে।’ নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণরা প্রাণ দিয়েছে। যে বাংলাদেশে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা তা অসহ্য হয়ে উঠেছিলো। এ কারণে যখন ছাত্রদের প্রাণ ঝরছিল- তখন সারাদেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোন মানুষ ছিল না তাদের সমর্থন করিনি। তাদের প্রাণের ফলে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে যে পচন ধরেছিল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছাড়া সেই পচন থেকে মুক্তির কোন উপায় ছিল না। ছাত্রদের আন্দোলন হঠাৎ করে সেই অবস্থা বদলে দিয়েছে। আর কোনো পচন নয়, আমরা সুস্থ, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।
ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ড. ইউনসূ বলেন, সংস্কার কেবল সরকারের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আসুন সবাই মিলে সংস্কার করি। যেখানে ভুল দেখবেন, আত্ম-জিজ্ঞাসা করবেন -সেখান থেকে বেরিয় আসার। ছেলেদের আত্মাহুতির দিকে তাকিয়ে ভুলপথ পরিহার করুন।
শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সরকার সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মেয়াদেকালে আমরা শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা এখনো জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। আমাদেরকে সাহস দিন, এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করি।’ তিনি শ্রমিকদের যা প্রাপ্য, মালিকদের তাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।