ঢাকা ব্যুরো: দেশে গণ অভ্যুত্থানের পর এখন একে একে গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিতে যোগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনেকে আবার বিএনপির অনেক নেতাকে ম্যানেজ করে বিএনপি নেতা বনেও গেছেন। সারাদেশের ন্যায় এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বনানীতেও।
বনানী থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ খাঁন এর ছেলে নাজমুল খাঁন ফারহান এখন ছাত্রদল নেতার পরিচয় বহন করছেন। আবার তাকে সম্প্রতি দেখা গেছে বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি চাঁন মিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন মিছিলে। নাজমুল খাঁন যেন লটারির টিকিট কেটেছেন। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল দুই জায়গায়তেই সুবিধা জনক জায়গা পাওয়ার চেষ্টায় আছেন, যেকোনো এক জায়গায় লটারি তো লাগবেই! এমন সুযোগে আছেন। ৫ আগস্টের পর থেকেই নাজমুল খাঁন আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কড়াইল বস্তি এলাকায় দলবল নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। দোকানপাট দখলের জন্য সংঘর্ষের ঘটনায় জড়াচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় কড়াইল বস্তির স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা চাঁদাবাজ জোনায়েদ মনির বাহিনী বস্তিতে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করলে তাদের সাথে ফরিদ খাঁন থাকতো বলে এই নাজমুল সেইসব অনুষ্ঠানের ফেসবুক লাইভ করতো আর সেই লাইভ ভিডিওতে জোনায়েতদের চাচা উপাধি দিয়ে তেল মারতে দেখা যেত। পরে কাউন্সিলরের পোলাপানের সাথে মারামারির ঘটনায় জড়ানোর কারণে ও ধর্ষণের অভিযোগে ফরিদ খাঁন এবং তার পরিবারকে বস্তি থেকে বিতাড়িত করে জোনায়েদ বাহিনী।
ফরিদ খাঁনের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনও করেছিল বস্তিবাসী। যদিও এসব কাউন্সিলর নাছিরের ষড়যন্ত্র বলে দাবি ফরিদের পরিবারের।
জানা যায়, বনানী থানায় ধর্ষণ মামলা হলে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস জেল খাটেন ফরিদ খাঁন। বর্তমানে তিনি ওই মামলায় জামিনে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, ফরিদ খাঁন ছিলেন জোনায়েদ বাহিনীর চাঁদাবাজির অন্যতম ঘনিষ্ঠ সদস্য। তার ছেলে নাজমুল খাঁনও তাদের হয়ে কাজ করতেন। পরে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হওয়াতে ফরিদকে কৌশলে সরিয়ে দেয় জোনায়েদ বাহিনী। দখলে নেয় বস্তিতে ফরিদের সব কিছু। পরবর্তীতে ফরিদ খাঁন তার সব কিছু ফেরত পেতে কখনো বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেলের সাথে এখনো ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান দুলালের সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করে কোথাও সুবিধা করতে পারেনি। এখন গণ অভ্যুত্থানের পর ফরিদ আবার বিএনপি নেতা হতে চান এবং তার ছেলে ছাত্রদল বা স্বেচ্ছাসেবক দল। মূলত তাদের এই চেষ্টা বস্তিতে চাঁদাবাজির রাজত্ব পূণরায় ফিরে পেতে।
দেখা গেছে, তারা বাপ ছেলে তাদের পুরানো ফেসবুক আইডি ডিলেট করে নতুন আইডি খুলেছেন। পুরোনো আইডিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির শতশত ছবি ছিল।
নাজমুল খাঁনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তার বাবার বৈধ আয়ের উৎস কী? তিনি জানিয়েছিলেন, তার বাবা ব্যবসা করেন। কী ব্যবসা করেন? জানতে চাইলে উত্তর দিয়েছিলেন, তার বাবার বেলতলা বস্তির বাজারে শেয়ার ছিল (যেটি জোনায়েদ বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো)। এছাড়া বস্তিতে দখল করে গড়ে তোলা আরো কিছু ঘর ও দোকানপাট ছিল। তবে এগুলোকে কী বৈধ ব্যবসা বলা যাবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেননি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর কড়াইল বস্তির বেলতলা অংশের দখলবাজ, চাঁদাবাজ জোনায়েদ বাহিনী পালিয়ে গেছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন পুরো বাহিনী। এখন বিএনপির পরিচয়ে তাদের চাঁদাবাজির সংসারের দায়িত্ব নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন নাজমুল খাঁনের মতো লোকেরা।