অনুসন্ধানী প্রতিবেদন—-
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : কক্সবাজারের চকরিয়ায় আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার ভুক্তভোগি শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এসব অভিযোগ লিখিতভাবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেন। তিনি মানেন না অন্তর্বতী সরকারের নির্দেশ গত ১৫ আগস্ট সবশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলার নির্দেশ দিলেও ওইদিন মাদ্রাসা আওয়ামী লীগ সরকারের আগের ছূটি কার্যকর করে মাদ্রাসা বন্ধ রাখে। এনিয়ে সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থী মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ১লা জানুয়ারি ২০২৪ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একের পর এক মনগড়া সিদ্ধান্ত, আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি, শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকারে বৈষম্যমূলক আচরণ ও নানা অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন মাদ্রসার পরিচালনা কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি সাবেক স্থানীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার।
মাদরাসার শিক্ষক, অভিভাবক, কর্মচারী ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। বিষয়টির প্রতি এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদ্রাসার ও কারিগর শিক্ষা মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অফিসে ভুক্তভোগী শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি থেকে টাকা উত্তোলন, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের ভবিষ্যত তহবিলের অর্থ আত্মসাত, শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের হুমকি ও হেনস্তা, শ্রেণি কার্যক্রমে স্বজনপ্রীতি, গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্যদের নির্বাচন না সম্পন্ন করা।
ভুক্তভোগি বাংলা প্রভাষক শিক্ষিকা হুরে জান্নাত মোবাইল ফোনে জানান, একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এহেছানের মাধ্যমে অধ্যক্ষ এনামুল হক কু-প্রস্তাব দেন, তাকে খুশি রাখার কথা বলে। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এনামুল হক বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন।
সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি মৌলনা ছাবের আহমদ জানান, তার (অধ্যক্ষ) ক্ষমতা অনেক। তিনি পলাতক চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলমের রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছেন।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, গত ২১/০১/২৪ আমাকে মোবাইলের মধ্যমে অশ্রাব্য গালমন্দা ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।বিষয়টি আমি অভিভাবক কমিটি এবং সহ-সভাপতিকে লিখিতভাবে অভিযোগ করি। গত ২৪/০১/২৪ মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি এনামকে লাঠি আনার নির্দেশ দেন।(অধ্যক্ষ) বলেন, সকল শিক্ষক, কর্মচারিদেরকে লাঠি দিয়ে মারার হুমকি দেন।
আরও বলেন, কথার বাহিরে গেলে মারতে মারতে দ্বিতীয় তলা থেকে নিজ তলা নিয়ে এসে হাড় মাংস গুড়ি করে মামলা দিয়ে পুলিশে দিবে। শিক্ষকদের বেতন বিলে সাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন তিনি।
জানুয়ারি-২৪ থেকে সাত মাসে ছাত্র- ছাত্রীদের ভর্তি ফি, মাসিক ফি, দাখিল থেকে ফাজিল ফরম ফিলাপ ফি, প্রবেশপত্র ফি, প্রত্যয়ন ফি, প্রশংসাপত্র ফি, সার্টিফিকেট ফি, নৈপূন্য এন্টি ফি, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর থাকলেও শিক্ষক প্রতিনিধি এহসানুল হককে দিয়ে ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করে। সিলেবাস বিক্রি বাবদ আদায় টাকা, দাখিল পরীক্ষা হল বাবদ উদ্বৃত্ত টাকা, মাদরাসার জমিজমা খাজনা আদায় বাবদ আয়, ভূর্তুকির টাকাসহ সবমিলে প্রায় মোট বিশ লাখ টাকা অবৈধ শিক্ষক প্রতিনিদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করে। এই বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হয়রানি করে এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি প্রদান করে।
আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এনামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পলাতক সাবেক এমপির মাধ্যমে মাদ্রসার চাকুরি নিয়েছি এই কারণে আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করতেছে।
১৫ আগস্ট মাদ্রাসা বন্ধ রাখার বিষয়ে বলেন, খোলা রাখার কোন অফিস আদেশ পায়নি এবং আমার চাচা মারা যাওয়ার কারণে মাদ্রাসা খুলতে দেরি হয়েছে।