সম্প্রতি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের হঠাৎ অপসারণ এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার নিরপেক্ষ বক্তব্য এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের প্রতি আহ্বান বিশেষভাবে চোখে পড়েছে। তবে, এই নিরপেক্ষতার মূল্য তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণের মাধ্যমে চুকাতে হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অবদানের প্রতি সম্মান এবং তাদের পুনর্গঠনের পরামর্শ ছিল সময়োপযোগী। তবে, সম্ভবত তার বক্তব্যে নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রয়াসটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতি এ ধরনের পরামর্শ দেয়া কি সত্যিই তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল? এমনকি যদি তা হয়ে থাকে, তবে কেন?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলটির প্রভাব সবসময়ই ব্যাপক। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এম সাখাওয়াত হোসেনের নিরপেক্ষ অবস্থান হয়তো সরকারে থাকা কিছু মহলে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যের নিরপেক্ষতা, যা মূলত দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকার সংকল্প, তাকে একটি কঠিন পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তার বক্তব্যে ছিল একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আহ্বান, যেখানে প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব পরিচয়ে এবং জনগণের ম্যান্ডেটে নেতৃত্ব দিতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, শুধুমাত্র নিরপেক্ষতার জন্যই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিরপেক্ষতার এই পরিণতি আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিরপেক্ষতা এবং সত্য কথা বলার স্থান কতটুকু? রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে যিনি সত্য প্রকাশ করেন, তাকে যদি অপসারণের শিকার হতে হয়, তাহলে সত্যের শক্তি কোথায়?
এম সাখাওয়াত হোসেনের অপসারণ নিছক একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের একটি বড় ইঙ্গিত বহন করে। একদিকে একটি প্রভাবশালী দলের অস্তিত্ব রক্ষা এবং অন্যদিকে সত্য ও নিরপেক্ষতার জন্য লড়াই-এই দুইয়ের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। আজকের বাংলাদেশে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, সত্য এবং ন্যায় বিচার কতটুকু স্বাধীন?