মাহবুবুর রহমান:
আজ স্বাধীন মুক্ত আমি আমার কলম। আমি আমার মতো করে লিখবো। কোন বৈষম্য থাকবে না আর। খুশিতে আমার লেখার মতো ভাষা নেই। নির্লজ্জ বেহায়া বেশরম আমি। তবু দু’কলম না লিখলে কেমন হয়? তাই লিখছি। শেখ হাসিনা একজন স্বৈরশাসক? দুর্নীতিবাজ? খুব খারাপ মহিলা? তাঁর মতো খারাপ মহিলা হয়তোবা ইতিহাসে আর পাওয়া যাবে না। তবু এই খারাপ মহিলাটির জন্য দু’কলম লিখতে কলম ধরলাম কেন ? জানি না। একটানা ১৫ বছর শাসন করে দেশটাকে লুঠেফুটে খেয়ে ফেলেছে। কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে তা হিসেব করা মুশকিল !!! এত খারাপ মহিলা ???
এত বড় বড় ব্রিজ করলেন। নদীর নিচ দিয়ে টানেল করলেন। পাঁচশ মডেল মসজিদ করলেন। মন্দির করলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করলেন। এত বড় বড় রাস্তা করলেন। ঢাকা থেকে নতুন রেল লাইন করলেন। কক্সবাজারকে রেললাইনের আওতায় আনলেন। রাজধানীবাসীর জন্য মেট্রোরেল করলেন। এলিভেট এক্সপ্রেস করলেন। গভীর সমুদ্র বন্দর করলেন। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ করলেন। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলেন। এত সুন্দর বিমান বন্দর করলেন। স্যাটালাইট করলেন। দেশের চেয়ে দ্বিগুণ সমুদ্র সীমা নির্ধারণ করলেন। ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময় করলেন। ভাসমান মানুষের জন্য নিজস্ব ঘর করে দিলেন। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। এইচএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে বইয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করলেন। বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, গর্ভবতী ভাতা, অসুস্থ হলে চিকিৎসা ভাতার ব্যবস্থা করলেন। এতো টাকা কোথায় পেলেন?? এতকিছু করার পরও আবার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলেন??? এতো টাকা কোথা থেকে এলো?? এই শেখ হাসিনার মতো খারাপ মহিলা আমি কি দেখেছি???
একটানা ১৫ পনের বছর ধরে মানুষের বাক-শক্তি, কথা বলার স্বাধীনতা লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন। মিড়িয়াকে গলাটিপে ধরেছেন। দুই-আড়াই হাজারের মতো পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার জন্য সরকারী সুযোগ সুবিধা করে দিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে বাইরে এসে মাই টিভি, সময় টিভি, মাছ রাঙা টিভি, যমুনা টিভি, বিজয় টিভি, এসএ টিভি, এটিএন নিউজ, এটিএন বাংলা, নিউজ ২৪, গ্লোবাল টিভি, গান বাংলা, এনটিভি, আরটিভি, একুশে টিভি, এখন টিভি, এশিয়া টিভি, ডিভিসি টিভি, ৭১ টিভি, প্রিন্ট, অনলাইনসহ মানুষের কথা বলার নানা পথ খুলে দিলেন। ইন্টারনেটে অবাধ ব্যবহারের জন্য যাবতীয় সুযোগ করে দিলেন। তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য তথ্য অধিকার আইন করে দিলেন। আপনি এতই খারাপ? বাংলার মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিলেন ??
আপিন শেখ হাসিনা এতো গুলো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছেন। এত গুলো মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়েছেন। বিদেশী অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে এসে শিক্ষাগ্রহণ করছে। আজকে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। নারী শিক্ষার জন্য নানা ধরণের সুযোগ তৈরী করে দিয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা তৈরী করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল সুযোগ করে দিলেন। আপনি খুব খারাপ মহিলা? আপনাকে দেখলে বাংলার মেয়েদের গায়ে জ্বালা ধরে যায় !!! আমরা এখন শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের আর কেউ ধমিয়ে রাখতে পারবে না। শেখ হাসিনার মতো কম শিক্ষিত মহিলাকে কি আমরা আর গণণায় ধরি??
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সামিল হয়েছিল কম বেশী। এই আন্দোলনে পুলিশের সন্তান ছিল না? সাংবাদিকদের সন্তান ছিল না? ছিল না সেনা নৌ বিমান বাহিনীতে চাকরী করা কারো সন্তান? ছিল না সরকারী আমলার সন্তান? ছিল না সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য? ছিল না ডাক্তার নার্স ও বিভিন্ন পেশায় চাকুরী করা তাদের সন্তান?
পুলিশ খুবই খারাপ? পুলিশ কি মানুষ?? সরকারের পেটোয়া বাহিনী। পুলিশকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু মাত্র দমন পীড়নের জন্য। গভীর রাত সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে কাউকে পাওয়া যায়নি। ফোন করেছি ৯৯৯ এ। মুহুর্ত্বের মধ্যে হাজির হয়েছিল পুলিশ। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে। জিডি করেছি থানায়। মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পোশাকটি ছিল বলে রাস্তায় যাওয়ার সময় সাহস পেয়েছিলাম। এই পুলিশকে আর রাখা যাবে না। চলো একসাথে থানায় আগুন ধরিয়ে দিই? যেখানে পুলিশ দেখি তার উপর হামলা করি? তাদের মেরে ফেললে মুহুর্ত্বেই চলে যাবো স্বর্গে !!?? শেখ হাসিনার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী না হয় দুর্নীতিবাজ জঘণ্য খারাপ!!! আমিতো মেধাবী! আমিতো ভালো!! আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। আমি কেন থানায় আগুন দিয়ে হাজার কোটি টাকার দেশের সম্পদ জ্বালিয়ে দেব???
পুলিশও নয়, সরকারী চাকুরীজীবীও নয়। রাস্তায় সাধারণ মানুষের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানে দোকেন হামলা করে মালামাল লুঠ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কল কারখানায় আগুন দিয়ে মালামাল লুঠ করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ। সরকার বদলে গেছে। কেউ মন্ত্রী হয়েছে। কেউ আমলা। যার ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ কে দিবে? কে দায়িত্ব নিবে এই সকল অভাবী মানুষের পরিবারের?
স্বৈরচারী ১৫ বছরের জালিম সরকার? শেখ হাসিনা সব লুঠপাট করে খেয়ে ফেলেছে? রাজপথে আন্দোলন করে তাকে আর ক্ষমতায় থাকতে দিলেন না। আমরা মেধাবীদের হাতে ক্ষমতা দেখতে চায়। মেধাবীরা ১৫ মিনিটের ক্ষমতা পেয়ে গণভবন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর সংসদ ভবনের সব লুঠপাট করে নিয়ে এসেছে। সেই লুঠপাটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গৌরবের সাথে প্রচার করছে। গণভবনের কচুশাক, লাউ, বেগুন, পেঁপে, পুঁই শাক, মুরগী, হাঁস, গরু, ছাগল, মাছ, হাঁস, হরিণ যে যা পেয়েছে নিয়ে এসেছেন। খুলে নিয়ে এসেছে এসি, ফ্রিজ, থালা বাসন, চায়ের কাপ, রুটি বানানো বেলুন, স্বর্ণ, কাপড় ছোপড় সবি। পরণের ব্রা নিয়ে এসে উল্লাস করে সেই ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। নির্লজ্জ বেহায়া বেয়াদব জাতি !!! মায়ের কাপড়ও খুলে নিতে পারি !!!! শেখ হাসিনা না হয় এতো খারাপ? আর আমিতো মেধাবী?? আজ সারা বিশ্ব ছি! ছি! করছে। ঘৃণায় থুথু দিচ্ছে! এতো নিকৃষ্ট নিচু জাতি !!!
শেখ হাসিনা কখনো মানবিক নয়। তাঁর মতো বিবেকহীন মানবতাবিরোধী আর কেউ নেই। এতো খারাপ মহিলা? গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গরীব মহিলাদের ঘরের টিন, থালা বাসন, যা পেয়েছে সব নিয়ে এসেছে। সেই সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কতবার শিরোনাম হয়েছে। আমরা কি সেই হিসাব রাখি? শক্তি ফাউন্ডেশন নামের এনজিও ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে নেয় কিস্তি দিতে দেরী হলে কি নির্যাতন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়! যিনি জামিন হয়েছেন তার বাসায় গিয়ে পর্যন্ত নির্যাতন করতে ভুলেনা। এনজিও টাকা নিয়ে কেউ বড় লোক হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বরং ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সেই সংবাদ প্রতিনিয়ত দেখেছি।
পৃথিবীর যে সকল দেশ অন্যদেশ থেকে স্বাধীন হয়েছেন। যে বা যিনি স্বাধীনতার জন্য আলাদা দেশ গঠন করার জন্য নের্তৃত্ব দিয়েছেন তাকে সে দেশের জাতির জনক বলে সম্মোধন করা হয়। পৃথিবীর কয়েকটা দেশের জাতির জনকের নাম তুলে ধরলাম। আফগানিস্তানের জাতির জনক আহমদ শাহ দুররানি। আর্জেন্টিনা, পেরুর জাতির জনক ডন হোজে দে সান মার্টিন। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের জাতির জনক স্যার লেনডেন পিন্ডলিং। বেলিজ জাতির জনক জর্জ ক্যাডল প্রাইজ। বলিভিয়ার জাতির জনক পাদ্রে দে লা পাত্রিয়া। ব্রাজিলের জাতির জনক প্রথম ডোম পেদ্রো এবং হোজে বনিফাসিও দে আন্দ্রাদা ই সিলভা। কম্বোডিয়ার জাতির জনক নরোদম সিহানুক। চিলির জাতির জনক বারনার্দো ও’হিগিন্সতা। চিন প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক সান ইয়াত-সেন। কলম্বিয়ার জাতির জনক সাইমন বলিভার। সুইডেনের জাতির জনক প্রথম গোস্তাভ। ক্রোয়েশিয়ার জাতির জনক আন্তে স্টারসেভিস। কিউবার জাতির জনক কার্লোস ম্যানুয়েল দে সেসপিদিস। চেক ল্যান্ডসের জাতির জনক চতুর্থ চার্লস। চেক ল্যান্ডসের জাতির জনক ফ্রেঙ্কিসেক পোলাৎস্কি। ডোমিনিকানের জাতির জনক জুয়ান পাবলো দুয়ার্তে। ইকুয়েডরের জাতির জনক সাইমন বলিভার। ঘানার জাতির জনক কাউয়ামি নকরুমাতার। গায়ানার জাতির জনক চেদ্দি জগানতার। হাইতির জাতির জনক জিয়ান-জ্যাকুইস সেলিনস। ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ইন্দোনেশিয়ার জাতির জনক সূকর্ণতার। ইরানের জাতির জনক দ্বিতীয় কুরুশ। ইসরায়েলের জাতির জনক থিওডোর হের্জল। ইতালির জাতির জনক দ্বিতীয় ভিক্টর এমানুয়েল। কেনিয়ার জাতির জনক জুমো কেনিয়েত্তা। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতির জনক কিম গুতার। কসোভোর জাতির জনক ইব্রাহিম রুগোভা। লিথুয়ানিয়ার জাতির জনক জন বাসানাভিসিয়াস। ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক ক্রস্টি মিজিরকভ। মালয়েশিয়ার জাতির জনক টানকু আব্দুল রহমান। মরিশাসের জাতির জনক স্যার সিউসাগার রামগোলাম। মেক্সিকোর জাতির জনক মিগাল হাইদালগো ইয়ে কসটিল্লা। নামিবিয়ার জাতির জনক স্যাম নজুমা। নেদারল্যান্ডসের জাতির জনক উইলিয়াম দ্য সাইলেন্ট। নরওয়ের জাতির জনক আইনার গেরহার্ডসেন। পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পানামার জাতির জনক সাইমন বলিভার। পাপুয়া নিউ গিনির জাতির জনক স্যার মাইকেল সোমারে। পর্তুগালের জাতির জনক ডোম আফোনসো হেনরিকস জাত। রাশিয়ার জাতির জনক রাশিয়ার প্রথমপিটার। সাহরাউই আরব গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক এল-ওয়ালি মুস্তফা সাঈদ। সেন্ট লুসিয়ার জাতির জনক স্যার জন কোম্পটন। সৌদি আরবের জাতির জনক আব্দুল আল আজিজ। স্কটল্যান্ডের জাতির জনক ডুনাল্ড দেওয়ার। সার্বিয়ার জাতির জনক ডুবরিকা কজিক। সিঙ্গাপুরের জাতির জনক লি কুয়ান ইউ। স্লোভেনিয়ার জাতির জনক প্রাইমোজ ট্রাবার। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক নেলসন ম্যান্ডেলা। স্পেনের জাতির জনক ক্যাথলিক মোনার্ক। শ্রীলঙ্কার জাতির জনক ডন স্টিফেন সেনানায়েক। সুরিনামর জাতির জনক জোহান ফেরিয়ার। তানজানিয়ার জাতির জনক জুলিয়াস নেইররি। তুরস্কের জাতির জনক কামাল আতাতুর্ক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির জনক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটন। উরুগুয়ের জাতির জনক হোজে গেরভাসিও আর্টিগাস। ভেনেজুয়েলার জাতির জনক সাইমন বলিভার। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কোন স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠাতা বা জাতির জনককে কোন জাতি অপমান করেছে বলে আমার জানা নেই। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে তার নিজস্ব জাতির জনকের ভাস্কর্য বা ছবি তার দেশে আছে। সে আদলে বাংলাদেশেও জাতির জনক বা প্রতিষ্ঠাতার ভাস্কর্য বা ছবি সব জায়গায় ছিল। কিন্ত ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং বা তার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা দেখছি সত্যি নির্বাক হয়ে গেছি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বা জাতির জনকের ভাস্কর্য যেভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সত্যিই আমি কি লজ্জিত হয়েছি? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার সাথে সাথে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাথার উপর প্রস্রাব করে দেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনারে জুতার মালার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সারাবিশ্ব দেখেছে সেই দৃশ্য!!! শ্রদ্ধেয় নেতা, শ্রদ্ধেয় জাতির জনক, শ্রদ্ধেয় জাতির প্রতিষ্ঠাতা, আমি নির্বাক লজ্জিত!!! ক্ষমা চাওয়ার মতো ভাষাও আমার নেই। নির্লজ্জ বেহায়া বেয়াদব জাতি!!!! আমি আমাকেই আমার গালে বিশ্ববাসীর সামনে জুতা দিয়ে মেরেছি!!! যারা এই সব করেছে তারা সবই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেওয়া তোমার মেধাবী জাতি!!! শেখ হাসিনা খুবই খারাপ!! স্বৈরচারী শাসক!!! কিন্তু জাতির পিতা, জাতির প্রতিষ্ঠাতার অপরাধটা কি??? সেই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আগামী প্রজন্ম হয়তোবা তাদের কাছ থেকে সেই প্রশ্নে উত্তর জেনে নিবে।
ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমার সোনার বাংলা বলতেই সারাবিশ্বে ভেসে আসে বাংলাদেশের ছবি। বাংলাদেশের মানচিত্র। সেই কবি গুরুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে চুরমাচুর। কোন সভ্যতায় আমরা নেমে এসেছি ?? শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। যার আঁকা ছবি সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে সারা বাংলাকে বিশ্বের মাঝে প্রতিনিধিত্ব করে সেই শিল্পাচার্য জয়নুলের ছবি ভাস্কর্য ভেঙ্গেচুরমাচুর। শেখ হাসিনা না খারাপ মহিলা বা খারাপ শাসক!!! কিন্তু বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আর জয়নুল আবেদীনের অপরাধ কি? ফুটবল আর পাখির ছবি সম্মিলিত ভাস্কর্য। মেধাবীদের কাছ থেকে তাও রেহাই পেয়েছে কি? সাবাস মেধাবী!! সাবাস বাংলাদেশ!!!
বিশাল সুসজ্জিত শৃঙ্খলবাহিনী। বিশাল সমুদ্রসীমা পাহাড়া দেওয়ার জন্য কিনলেন সাবমেরিন। অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ। সাগরের নীল পানির সাথে তাল মিলিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে বিশাল সমুদ্রের তেল গ্যাস থেকে শুরু করে নানা সম্পদ। আকাশ বাহিনীর জন্য কিনলেন যুদ্ধ জাহাজ। অত্যাধুনিক বুমারু বিমান। স্থল বাহিনীর জন্য কিনলেন নানা ধরণের যুদ্ধ সরঞ্জাম। বিশ্বের অন্যতম বাহিনী হিসেবে গড়ে তুললেন। বিশ্বের বাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে। এত বড়ো বিশালবাহিনী। জাতীয় বাজেটের চেয়ে দ্বিগুণ বাজেট। জাতি সংঘের শান্তি রক্ষীবাহিনীর মধ্যে অন্যতম। নানা পদকে প্রসংশায় পঞ্চমুখ। বাংলাদেশের আটারো কোটি মানুষের প্রাণ। গৌরবের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদ। সুরক্ষা করতে কি পেরেছি??? কি লুঠরাজ আর উল্লাসে ভরপুরছিল এই দুই দপ্তরে!!! অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল বিশ্ববাসী!!! শেখ হাসিনার মতো খারাপ মহিলা আর কি আছে?? এত অস্ত্র কেনার টাকা কোথায় পেলেন??? এত অস্ত্র কিভাবে কিনলেন??? আবার এতো দুর্নীতিও কিভাবে করলেন???
নব্বই দশকের আগের কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যঙ্গকরে বিরোধীরা কুত্তিযোদ্ধা বলতো!!! কোন মুল্যায়ন করা হতো না। রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া হয়নি কোন মর্যাদা। শেখ হাসিনা খারাপ মহিলা নয় কি? তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে মাসিক সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করে দিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরীর ব্যবস্থা করে দিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিলেন। এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি নাতিনীর জন্য আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বিপদে পড়েছে। এই বিপদের দিনে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়েছে কি ? বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গছে একজন মুক্তিযোদ্ধাও প্রতিবাদ করেছে কি? করবে না, কারণ শেখ হাসিনা তো খারাপ মহিলা??
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বিশাল পুরানো রাজনৈতিক সংগঠন। কত বড় বড় নেতা। তাদের পেছনে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামান্য ধাক্কায় সরকার চলে গেলো। এই সকল ক্ষমতাধর নেতারা কই? হাজারো নেতা কর্মীর ভিড়ে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ অফিসে তাদের জন্য কাছেও যাওয়া যায়নি। সেই আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন জ্বালিয়ে দিলো কোন নেতা কর্মী এগিয়ে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলছে। ভাস্কর্যের গলায় জুতার মালা দিচ্ছে। কোন জেলা থেকে নেতা-কর্মীর প্রতিবাদ শুনলাম না। বাবা বলেছিল ১৯৭৫ সালেও আগস্টে এই রকম হয়েছিল। আজ ২০২৪ সালের আগস্টে দেখলাম। কয়েকদিন পরে গোপালগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান খানের নের্তৃত্বে প্রতিবাদ হয়েছে। আর কোন জেলায় কোন প্রতিবাদ হয়নি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা রুখে দাঁড়ালে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে? আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা স্বার্থপর বেইমান নিমকহারামী। বিপদের সময় শেখ হাসিনার পাশে কেউ আছে কি??? যারা আপনাকে বিক্রি করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা আজ আপনার পাশে নেই। কারণ আপনিতো খারাপ মহিলা !!??
যে সকল সরকারী অফিসারেরা আওয়ামী লীগের পা ছেটে তেল মেরে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তোললেন। তাদের দায়ভার বহন করবে কেন শেখ হাসিনা? দুই দিনেই বোল পাল্টিয়ে ফেললেন!! চাকরী হারানোর ভয়ে ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে গেলেন। বড় বড় বিসিএস অফিসারেরা শেখ হাসিনা যা বলে নাই তাই করেছেন। ধরাকে সরাজ্ঞান করেন নাই। আপনারাই নিজেরাই লাল রঙ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ঢেকে দিচ্ছেন!!! কি অপূর্ব মেধাবী!!! নির্লজ্জ বেহায়া বেয়াদব বেইমান জাতি!! শেখ হাসিনা বলেছিল আপনাদের বঙ্গবন্ধুর ছবি বা ভাস্কর্য বানাতে? টাকা মেরে দেওয়ার জন্য এই গুলো সব বানিয়ে ছিলেন। আর এখন বঙ্গবন্ধুর ছবিকেই অপমানিত করতে বিবেক বাঁধছে না? কি মেধাবী বিসিএস অফিসার!!! সাবাস বাংলাদেশ এগিয়ে যান!!!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখানে কি পুলিশের সন্তান নেই? এই আন্দোলনে কি তারা অংশগ্রহণ করেন নাই? এই আন্দোলনে যে সকল শিক্ষার্থীরা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা সালাম। তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। যে সকল পুলিশ সরকারী হকুম বা আদেশ মানতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা সালাম। আমি তাদের স্যালুট জানাই। তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিবে কে? এই আন্দোলনে সাংবাদিকদের সন্তানেরা কি ছিল না? যে সকল সাংবাদিক আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিবে কে?
এই আন্দোলনে হিন্দুদের সন্তানেরা কি ছিল না? তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে হিন্দুদের মন্দিরে বাড়ীতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হবে কেন? এই দায়ভার কে নিবে? একজন শেখ হাসিনার দেশত্যাগ। তিনি হয়তোবা খুব খারাপ? তাহলে হিন্দুদের উপর হামলা হবে কেন? এটা কোন উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীদের রাজনৈতিক উত্থান?? হিন্দুরা না হয় ভারতপন্থী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় মাজারে মাজারেও হামলা হয়েছে। ভাঙ্গচুর হয়েছে। এটা কোন ধরণের সভ্যতা? মাজারে যিনি শুয়ে আছেন তিনিতো কোন দিন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি অন্যায় কোন কাজেও লিপ্ত ছিল না। তাহলে একজন শেখ হাসিনার খেসারত কেন আওলিয়ারা দিবেন??? আমরা সভ্য জাতি উচ্চ শিক্ষিত হয়েছি। আদব শিখেছি কি???
ইসলামের ইতিহাস জানা আছে। জানা আছে কারবালার ইতিহাস। বাংলার ইতহিাস আমার জানা আছে। জানা আছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের ইতিহাস। জানা আছে নবাব টিপু সুলতানের ইতিহাস। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে লেখা আছে এজিদ, সীমার, মীর কাসিম, মীর জাফর। আর কোন জাতির মধ্যে বেঈমান, মুনাফেক, নির্লজ্জ, বেয়াদব, বেহায়া আছে কি?
একটানা ১৫ বছরের শাসক। শেখ হাসিনা। জাতির জনকের কন্যা। ক্ষমা চাওয়ার মতো সাহসও আমার নেই। আমি নির্লজ্জ বেহায়া বেয়াদব জাতি!!! আমি আমার পিতাকে উলঙ্গ করতে পারি!!! আমি আমার মায়ের কাপড় খুলে নিতে পারি!!! আমি আমার পিতার অপমানে প্রতিবাদ করিনা। আমি কাপূরুষ!!! ধিক! ধিক!! ধিক!!! আমি মেধাবী, আমার উচ্চ শিক্ষা!!! আমি উন্নতির চরম শিখরে উঠেছি। সভ্য হতে পারিনি।
লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
E-mail: lvlchkm885@gmail.com