নগর প্রতিবেদক: জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে ১০ দিনব্যাপী ৩৯ তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনে কলকাতার আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা সাখাওয়াত হোসাইন বারকাতী বলেছেন, ৬১ হিজরিতে পাষণ্ড ইয়াজিদের হাতে ইসলামের স্বকীয়তা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। জনমত তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে ইয়াজিদ মসনদে বসেই মদ জুয়া ব্যভিচার অনাচারকে বৈধতা দিয়ে ইসলামের শাশ্বত আদর্শের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। আর ইয়াজিদি বাতুলতার বিপরীতে বীরদর্পে ঈমানি শক্তি নিয়ে দ্বীনের স্বকীয়তা রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। দ্বীনের জন্য এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাই শাহাদাতে কারবালার দর্শন। গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চান্দগাঁও দরবারে বারীয়া শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরিকত আল্লামা সৈয়দ বদরুদ্দোজা বারী (ম.জি.আ.)। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গরু সারাদিন ঘাস খায় আর সর্বোত্তম খাদ্য দুধ দেয়। আর সাপ দুধ খায়, অথচ সে বিষ দেয়। এটাই তাদের স্বভাব ও ফিতরাত। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আলেম অনেকেই আছেন। কিন্তু ইলমের সঙ্গে আমলের সংযোগ ঘটাতে হবে। ইলমের সঙ্গে ইশক মহব্বতের সংযোগই কাম্য। আর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা জালালুদ্দীন আলকাদেরী (রহ.) অত্যন্ত আমলদার আশেক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল তাঁর ত্যাগ আন্তরিক প্রয়াসের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই মাহফিলই হবে তাঁর জন্য সদকায়ে জারিয়া। ষাটের দশকে মাত্র একশত টাকা পুঁজি দিয়ে নিজের ব্যবসায়িক জীবন শুরুর কথা উল্লেখ করে সূফি মিজানুর রহমান বলেন, কঠোর পরিশ্রম এবং মহান আল্লাহর মেহেরবানিতে আজ আমি এ পর্যায়ে উঠে এসেছি।
যুব তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে সফলতা ছিনিয়ে আনতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কাজে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। জমিয়তুল ফালাহর শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আমাদের ঈমানী চেতনার প্রতীক বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি। তিনি বলেন, কারবালায় হক–বাতিল তথা সত্য মিথ্যার মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব–সংঘাত হকপন্থী গণকল্যাণকামী ইমাম হোসাইনি কাফেলাই চূড়ান্ত বিচারে জয়ী হয়েছে। ধিকৃত, পরাজিত ও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইয়াজিদ। জনগণের দাবি ও প্রত্যাশাকে পদদলিত করে অন্যায়, মিথ্যা, স্বৈরতন্ত্র ও জুলুমবাজি চাপিয়ে দেয়ার কারণে নরপিশাচ বর্বর ইয়াজিদি গোষ্ঠীর চিরতরে সমাধি রচিত হয়েছে কারবালা ময়দানে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুন্নিয়ত চর্চার একাল– সেকাল বিষয়ে আলোচনা করেন নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ এনামুল হক সিকদার।
তিনি বলেন, যুগে যুগে নানা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুন্নিয়তচর্চা চলে আসছে। শরিয়ত– তরিকতের অনুশীলন ও সুন্নিয়তচর্চা কখনো থেমে ছিলনা। তাসাউফ, সূফিবাদ ও মাজহাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ধিকৃত হয়ে আছেন ইবনে তাইমিয়া ও মওদুদী। এই ভ্রান্ত মতবাদীদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে আজ জিকির উঠে গেছে, তরিকতচর্চা আজ উঠে যাচ্ছে। রুহানিয়তচর্চা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সাহাবীগণের দৃষ্টিতে আহলে বায়তের মর্যাদা বিষয়ে আলোচনা করেন রাউজান গহিরা এফকে জামেউল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দিন আলকাদেরী। তিনি বলেন, সাহাবীগণের মাথার মুকুট হচ্ছেন আহলে বায়তে রাসূল (দ.)। আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাঁরাই সর্বোচ্চ মানদণ্ড দেখিয়ে গেছেন। শিয়া রাফেজি নাসেবিদের সঙ্গে আমাদের দূরতম সম্পর্কও নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত।
অতিথি ছিলেন, আঞ্জুমান রিসার্চ সেন্টারের গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ রফিক উদ্দীন সিদ্দিকি, আঞ্জুমানে–এ–রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক চৌধুরী। কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ.) পেশ করেন শায়ের মোহাম্মদ তানভীর।
মাহফিল সঞ্চালনা করেন, ড. আল্লামা জাফর উল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক আলী হোসেন সোহাগ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ দিলশাদ আহমেদ, মোহম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, আবদুল হাই মাসুম, মাওলানা আবুল হাশেম শাহ, শাহাজাদা আমানুল্লাহ আহাসান, হাফেজ ছালামত উল্লাহ, এস এম সফি, ক্যাপ্টেন এনামুল হক, এএফ মোহাম্মদুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াদুদ, মাহবুবুল আলম, খোরশেদ আলী চৌধুরী, মৌলানা নুর মোহম্মদ আলকাদেরী, হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক, হাফেজ জালালুদ্দীন, ফজলুর রহমান সাহেদ, মাইনুদ্দিন মিঠু, শরফুদ্দীন জঙ্গী, অধ্যাপক অহিদুল আলম প্রমুখ।
সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন থেকে পর্দাসহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা থাকবে।