প্রেস বিজ্ঞপ্তি: প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার (২৬ মার্চ)সকালে নগরের জিইসি মোড়স্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানানোর প্রাক্কালে তিনি বলেন, আমাদের একজন কবি বলেছেন, ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়, দাসত্ব শৃঙ্খল কে পরিবে পায়’। দাসত্ব শৃঙ্খল ভাঙাই মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন। প্রায় একই কথা বলেছেন মহাকবি মিল্টন। তিনি বলেছেন, ‘ইট ইজ বেটার টু রেইন ইন দ্য হেল দেন টু সার্ভ ইন দ্য হেভেন (স্বর্গে দাসত্ব করার চেয়ে নরকের রাজত্বই শ্রেয়)’ অর্থাৎ মহাকবি মিল্টন তাঁর মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট-এ এই বক্তব্য দিয়ে বলতে চেয়েছিলেন, স্বাধীনতার উপরে কিছু নেই। কারণ তিনি ক্রমওয়েলের সচিব ছিলেন, যে-ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডকে একটি রিপাবলিকে পরিণত করেছিলেন; ইংল্যান্ডের জনগণকে নাগরিক অধিকার দিয়েছিলেন রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে। দার্শনিক হেগেলও বলেছেন, ইতিহাস হলো স্বাধীনতার চেতনার অগ্রগতির ইতিহাস। যে-জাতি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভাসিত নয়, সেই জাতি জাতিই নয়।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালির জন্য প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রমালিকানার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ১৯৭২-এর ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে যখন সংবিধান উপস্থাপন করেন, তখন বলেছিলেন, এটিই বাঙালির প্রথম সংবিধান। এই সংবিধানেই বাংলাদেশের জনগণকে সব ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্যেক নাগরিককে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। তিনি গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, তিনি শোষিতের গণতন্ত্র চান, শোষকের নয়। আজ বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে বিশাল উন্নয়ন অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন ৬০ শতাংশ লোক দারিদ্র-সীমার নিচে ছিল। আজ ১৮ শতাংশ লোক দারিদ্র-সীমার নিচে। তখন গ্রামগুলো ছিল অন্ধকার। আজ গ্রামের প্রতি গৃহে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ১৩ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শিক্ষার ক্ষেত্রও বিশালভাবে প্রসারিত হয়েছে। প্রতি বছরের পহেলা জানুয়ারি প্রায় ৩৫ কোটি বই ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে এখনও আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। অনেকদূর এগুতে হবে। বৈষম্যও বেড়ে চলেছে। এই বৈষম্য দূরীভূত করতে হবে। কারণ আমাদের সংবিধানের অন্যতম একটি স্তম্ভ হলো সমাজতন্ত্র বা সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি অনুশীলন করতে হবে।
ড. অনুপম সেন শিক্ষার্থীদের দেশাত্মবোধ ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য শিক্ষকদের আহ্বান করেন।
শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন-প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী শামীম সুলতানা, ট্রেজারার এবং প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ, রেজিস্ট্রার জনাব খুরশিদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের প্রফেসর অমল ভূষণ নাগ, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের প্রফেসর ড. মিহির কুমার রায়, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের সহকারী ডিন প্রফেসর এম. মঈনুল হক, স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সোহেল এম. শাকুর, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাহীদ মো. আসিফ ইকবাল, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী, পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল ইসলাম ও ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার দাশসহ সকল শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
পরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিসহ অন্যান্যদের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।