খন রঞ্জন রায়: সমাজ বিজ্ঞানী ই.আর গ্রোভস বিবাহ সম্বন্ধে প্রত্যাশিত হাসি দিয়ে বলেছিলেন-বিবাহ হচ্ছে দুঃসাহসিক বন্ধুত্ব। যার আইনগত নিবন্ধন ও সামাজের সমর্থন নিয়ে নারী-পুরুষের একত্রে বসবাসের প্রথাগত উপায়। প্রথাসিদ্ধ আচরণের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তিপত্রও বিবাহ। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারীর মধ্যে আইনসিদ্ধভাবে একত্রে বসবাসের চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক। বারোয়ারি সম্পর্কের বাইরে- বৈধ চুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন। এই চুক্তিতে নিবিষ্ট চিত্তে নির্বিঘ্নে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন হয়।

বিবাহ নিয়ে বিভিন্ন সমাজে, নানা দেশে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্ভট সব কীর্তিকলাপ থাকলেও বিবাহ মূলত দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সামাজিক স্বীকৃতি। অতীব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে বহুল প্রচারিত একটি কথা আছে। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। জীবিত ও বিবাহিত। অদম্য আবেগ তাড়িত এই বিষয়টি নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে আনিবার
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়ে গাঁথিয়াছি গীতিহার
কতরূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে আনিবার।”

বিবাহের ব্যক্তিগত ও সামাজিক তাৎপর্য আছে বলেই সাহিত্যের সাথে বিবাহরীতি ‘তক্কে তক্কে’ থাকে। সমাজে নানা প্রকার আনুষ্ঠানিকতা আর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ কার্য সম্পাদিত হয়। সামাজিকভাবে মনোগামী, বহু স্ত্রী, বিধবা বিবাহ, ভ্রাতৃ বিধবা বিবাহ, শ্যালিকা বিবাহ, প্যারালাল বিবাহ, অর্ন্তবিবাহ ইত্যাদি প্রকারভেদ থাকলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা বরদাশত করে না।
প্রত্যেক ধর্মের আলাদা আলাদা ভাবভঙ্গি, আইন-কানুন নিয়মনীতিতে বিবাহের কলকাঠি নড়ে।

ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সম্প্রদায়, আদিবাসী গোষ্ঠী, দলগত ব্যক্তিবর্গ, কোন সংস্থা কিংবা রাষ্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত হতে হয়। স্পর্শকাতর আবেগজড়িত বিষয় ‘ধর্ম’ হলেও বিবাহের ক্ষেত্রে সঞ্জীবনী শক্তি রাষ্ট্রীয় আইন। এই জন্য বিবাহকে বৈশ্বিক সর্বজনীন সংস্কৃতি বলা হয়। এটি মানব সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যুগ যুগ ধরে মানুষের সহজাত প্রবনতার মধ্য দিয়ে আদিরূপ থেকে বর্তমান দ্যুতিময় বৈশিষ্ট্য উপনীত হয়েছে।

বিবাহ বৈশিষ্ট্যের সৌন্দর্যের রূপ পরিবেশনের দিক থেকে অতি প্রাকৃতিক শক্তির ভূমিকা পালন করেছে ‘ধর্ম’ ধর্মীয় অনুশাসন। ব্যক্তি জীবনের চাকা ঘোরাতে বিবাহের শাস্ত্রীয় বিধান বৈদিক যুগ থেকেই জীবনের প্রধান প্রাপ্তি ও পরম সার্থকতা বলে বিবেচিত।
ঋক্বেদে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা সামাজিক, ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য, পারস্পরিক মান্যতা বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে। মনুস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রে হিন্দু বিবাহের বিস্তৃত পরিসরে প্রকার রীতির মাধ্যমে ইস্পাত কঠিন রজ্জু দ্বারা বিবাহ বন্ধন বেঁধে রাখার নির্দেশ আছে। ‘ব্রাহ্ম’, ‘দৈব’, ‘আর্য’, ‘প্রজাপত্য’, ‘অসুর’, ‘রাক্ষস’, ‘পৈশাচ’ ও ‘গান্ধর্ব’-এই আট ধরনের বিবাহব্যবস্থা থাকলেও ব্রাহ্মবিবাহকেই অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

ধর্মশাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী নিজ বর্ণের মধ্যে বিবাহ অগ্রাধিকার হলেও অন্য বর্ণের সাথে বিবাহের অধিকার বলেও স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রকৃতভাবে সব সংস্কৃতিতেই বিয়ের উদ্ভব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিজস্ব তত্ত্ব আছে। ইসলাম ধর্মে বিবাহ একটি আইনগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধান। ইসলামে বিবাহের বর্ণনা ও বিশ্লেষণে দেখা যায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও ধর্মীয়ভাবে নির্ধারিত একটি বস্তুনিষ্ঠ চুক্তি ‘বিবাহ’। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক স্থাপিত হওয়া এই চুক্তিপত্র কাবিননামা নামে পরিচিত। সমকালের প্রেক্ষাপটে আর্থসামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কাবিননামায় স্বামী কর্তৃক প্রদেয় মোহরানার পরিমাণ উল্লেখ থাকে। স্ত্রীর বিশেষ অধিকার দেনমোহর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বা নগদ এবং বাকি থাকা অবস্থায় স্বামীকে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

হিন্দু ধর্মেও পণপ্রথা একটি স্বীকৃত রীতি। যা বরপক্ষ কনের পক্ষকে নগদ অর্থ প্রদানের প্রাচীন ব্যবস্থা। বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম সমাজের মনোভঙ্গির বিভিন্নতার আলোকে বিবাহ ব্যবস্থায় পণ ও যৌতুক প্রথা বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে ‘যৌতুক’। অসহায় আত্মসমর্পিত যৌতুক ব্যবস্থা এখন একটি বড় সামাজিক ব্যাধি। এই জন্য কন্যা সন্তান জন্ম নিলেই মা বাবার বুকের ভেতরে ঝড় ওঠে। ক্রমেই সক্রিয় হয়ে ওঠে যৌতুক নামের অভিশপ্ত ব্যবস্থা।

যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যাতায়াত ব্যবস্থা করতে অভিভাবকদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সেখানে আবার অযাচিত, অনির্ধারিত যৌতুক স্বভাবতই অভিভাবকের অনুভূতিতে খোঁচা দেয়। শুরু হয় কন্যা সম্প্রদান চিন্তা। পরিণত বয়স হওয়ার আগে বিবাহ। বাল্যবিবাহ এবং তা ইতিহাসের অংশ হয়। পুরো জাতির শিরায় শিরায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। উনবিংশ শতাব্দীতে বাল্যবিবাহবিরোধী সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি হয়, নানা টালবাহানা শেষে-১৮৭২ সালে হিন্দু বিবাহ আইন পাশ হয়।

বয়সের আদ্যোপান্ত বিবেচনা করে বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের জন্য ১৪ এবং ছেলেদের জন্য ১৮ ধার্য্য করা হয়। এরপরও হেঁয়ালিপনা নিয়ে চলছিল বাল্যবিবাহ। ১৯২১ সালে হয় আদমশুমারি। এখানের রিপোর্টে আফসোসের সাথে দেখা যায়, বিয়ের সময় মেয়েদের ১২ এবং ছেলেদের ১৩ গড় বয়সে বিয়ে হচ্ছিল। বাল্যবিবাহ নিরোধ নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীদের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করা হয়। এই আইনে ১৪ বছরের নিচের মেয়ে এবং ১৮ বছরের নিচের ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়।

অনাদিকাল থেকে সমাজকে আলোড়িত করা বাল্যবিবাহ ব্যবস্থার নতুন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার নতুনভাবে চিন্তা করে। পুরনো আইন রদ করে প্রণয়ন করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭। এতে ছেলের বয়স ২১ আর মেয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হয়। মর্মসন্ধানী এই আইনে অনেক কঠোর-কঠিন নিয়মনীতি অবলম্বন করা হয়। বাল্যবিবাহ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার করা হয়। ‘বর আসবে এখনি, নিয়ে যাবে তখুনি এই আপ্তবাক্যকে অসার প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। এরপরও কালপরিক্রমায় বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান দেশ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতি ৩টি বিয়ের মধ্যে দু’টিই হয়েছে বাল্য বিয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের আখ্যানধর্মী রিপোর্টে দেখা যায়, ১৮ বছরের বয়সের নিচে বিয়ে হয়েছে, গর্ভধারণ করেছে এবং সন্তান জন্ম দিয়েছে এমন মেয়ের হার ৫১ শতাংশ।

বাংলাদেশের জন্মহার হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ আর অল্পবয়সে সন্তান ধারণকেই প্রবল বাধা বলে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিস অ্যান্ড হেলথ সার্ভের পরিচালিত জরিপে দেখানো হয়েছে। প্রচলিত আইনে বিয়ে বিষয়ে নানা ধরনের কঠোর-কঠিন শাস্তিযোগ্য বিধান থাকলেও বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ে মানব অস্তিত্বের “জিয়ন কাঠি”। বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সমাজ-স্বীকৃত এবং আইনগত দায়িত্ববোধের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় বৈধভাবে সন্তান-সন্তানাদির জন্ম দেওয়া। বিয়ে ব্যবস্থার লড়াই আসলে বহুমুখী।

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে, পরিবারে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে পরিকল্পিত বিবাহ, শিশু বিবাহ, বহু বিবাহ জোরপূর্বক বিবাহ সেই সব সংস্কৃতির ঐতিহ্য বলে মান্য করা হতো। এই সব ঐতিহ্য এখন হতশ্রী। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। বিয়ে এখন বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতেই পরিমিতবোধের। নির্দিষ্ট করা আইনের বাইরে নড়াচড়া করার উপায় নেই।

মানুষের দাম্পত্য জীবনযাপন প্রণালী এখন আইনী কাঠামোর ছায়ায় দাঁড়িয়ে। এরপরও বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থার দুঃচিন্তার কারণ হয়ে- অনেক রাষ্ট্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থায় অসম বিবাহ ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিচ্ছে। আইনগত স্বীকৃতি পেয়ে বংশ বিস্তার ও উত্তরাধিকারের সুযোগ পাচ্ছে। অতি সাম্প্রতিককালে সমলিঙ্গীয় সর্বনাশা বিবাহ ব্যবস্থার উপর প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে শ্রদ্ধাশীল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করছে।

বিবাহরীতির প্রীতির বাসরঘরে কালসাপ ঢুকে পড়েছে। খ্যাতিমান লোকসংগীত গায়িকা ফরিদা পারভিনের ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘প্রেমের কি স্বাদ আছে বলো’-কে অভিশপ্ত করছে। বেদনার করুণ রসে আচ্ছাদিত করছে বিবাহের উষ্ণ পরশকে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বদৌলতে বিয়ের যে অদ্ভুত নিয়মনীতি তা প্রকাশ্যে আসছে। ডিজিটাল প্লাটফরম, ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব আবিস্কারের সবকিছুই যেমন পরিস্কার হয়েছে, জানাশোনার পরিধি বেড়ে গেছে। এর আগেও কোনো না কোনোভাবে মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার সুযোগ ছিল।

উনবিংশ শতাব্দীতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের ফলে পারিবারিক মূল্যবোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। বিবাহ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের পারস্পরিক নৈতিকতা বোধ, পবিত্রতা ও ঔচিত্য বোধের উন্নয়ন-অর্জন ঘটে। তত্তগতভাবে নানা ধর্মের নানা বিধি-বিধান থাকলেও তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন দ্বারা সজ্ঞায়িত হতে থাকে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে অনেক দায় ও অধিকারের আইনীভিত্তি লাভ করে।
বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে মুখ্য হলেও বিয়ের স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।

স্ব-ঘোষিত আর স্ব-ভূষিত দাম্পত্য আকারে-ইঙ্গিতে নয়; আইনিভাবে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিধান অনুযায়ী মুসলিম প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। ২০১৩ সালের হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালার আলোকে হিন্দু বিবাহ আইন কাঠামোয় আনা একটু ধীরস্থিরভাবে হলেও তা বাধ্যতামূলকের পর্যায়ে যাচ্ছে। দেশের ভেতরে জীবনযাপনের বেলায় এই আইন মাটিচাপা দিয়ে রাখলেও বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক। বিয়ের সনদ, নিকাহনামা প্রদর্শনে বেখেয়ালের সুযোগ নেই।
বিয়ে হোক আর বিবাহ হোক কিংবা শুভ বিবাহ শব্দের অর্থ পূর্ণিমার সন্ধ্যার মতো মোহময়। কাউকে বহন করে আনা-বিবাহ তিল তিল করে গড়ে ওঠা সমাজের ক্ষুদ্রতম একক গঠনে বিশাল বটবৃক্ষের মতো মায়াবী ছায়া দেয় সমাজে। বাস্তব ও স্বাভাবিক প্রবাদ- যার বিয়ে তার খোঁজ নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই।

আনন্দ-বেদনার মিশ্র অনুভূতিতে সৃষ্টি বিবাহকে সহজ ও সাম্যের কাতারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে পালিত হয় ‘বিশ্ব বিবাহ দিবস’।
আমেরিকান সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ম্যারেজ এনকাউন্টার’ দ্বারা শুরু যুক্তিগ্রাহ্য এই দিবস। বিবাহিত জীবনে পারস্পরিক বিশ্বস্ততা, ত্যাগ এবং আনন্দময় সৌন্দর্যকে সম্মান জানিয়ে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালন করা হয় এই দিবস। আত্মভাবনার প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশেষ বৈচিত্র্যে ‘বিশ্ব বিবাহ দিবস’ এগিয়ে যাবে এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হই। লেখক-খন রঞ্জন রায়,বিশিষ্ঠ প্রবন্ধিক

খন রঞ্জন রায়: সমাজ বিজ্ঞানী ই.আর গ্রোভস বিবাহ সম্বন্ধে প্রত্যাশিত হাসি দিয়ে বলেছিলেন-বিবাহ হচ্ছে দুঃসাহসিক বন্ধুত্ব। যার আইনগত নিবন্ধন ও সামাজের সমর্থন নিয়ে নারী-পুরুষের একত্রে বসবাসের প্রথাগত উপায়। প্রথাসিদ্ধ আচরণের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তিপত্রও বিবাহ। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারীর মধ্যে আইনসিদ্ধভাবে একত্রে বসবাসের চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক। বারোয়ারি সম্পর্কের বাইরে- বৈধ চুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন। এই চুক্তিতে নিবিষ্ট চিত্তে নির্বিঘ্নে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন হয়।

বিবাহ নিয়ে বিভিন্ন সমাজে, নানা দেশে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্ভট সব কীর্তিকলাপ থাকলেও বিবাহ মূলত দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সামাজিক স্বীকৃতি। অতীব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে বহুল প্রচারিত একটি কথা আছে। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। জীবিত ও বিবাহিত। অদম্য আবেগ তাড়িত এই বিষয়টি নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে আনিবার
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়ে গাঁথিয়াছি গীতিহার
কতরূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে আনিবার।”

বিবাহের ব্যক্তিগত ও সামাজিক তাৎপর্য আছে বলেই সাহিত্যের সাথে বিবাহরীতি ‘তক্কে তক্কে’ থাকে। সমাজে নানা প্রকার আনুষ্ঠানিকতা আর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ কার্য সম্পাদিত হয়। সামাজিকভাবে মনোগামী, বহু স্ত্রী, বিধবা বিবাহ, ভ্রাতৃ বিধবা বিবাহ, শ্যালিকা বিবাহ, প্যারালাল বিবাহ, অর্ন্তবিবাহ ইত্যাদি প্রকারভেদ থাকলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা বরদাশত করে না।
প্রত্যেক ধর্মের আলাদা আলাদা ভাবভঙ্গি, আইন-কানুন নিয়মনীতিতে বিবাহের কলকাঠি নড়ে।

ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সম্প্রদায়, আদিবাসী গোষ্ঠী, দলগত ব্যক্তিবর্গ, কোন সংস্থা কিংবা রাষ্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত হতে হয়। স্পর্শকাতর আবেগজড়িত বিষয় ‘ধর্ম’ হলেও বিবাহের ক্ষেত্রে সঞ্জীবনী শক্তি রাষ্ট্রীয় আইন। এই জন্য বিবাহকে বৈশ্বিক সর্বজনীন সংস্কৃতি বলা হয়। এটি মানব সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যুগ যুগ ধরে মানুষের সহজাত প্রবনতার মধ্য দিয়ে আদিরূপ থেকে বর্তমান দ্যুতিময় বৈশিষ্ট্য উপনীত হয়েছে।

বিবাহ বৈশিষ্ট্যের সৌন্দর্যের রূপ পরিবেশনের দিক থেকে অতি প্রাকৃতিক শক্তির ভূমিকা পালন করেছে ‘ধর্ম’ ধর্মীয় অনুশাসন। ব্যক্তি জীবনের চাকা ঘোরাতে বিবাহের শাস্ত্রীয় বিধান বৈদিক যুগ থেকেই জীবনের প্রধান প্রাপ্তি ও পরম সার্থকতা বলে বিবেচিত।
ঋক্বেদে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা সামাজিক, ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য, পারস্পরিক মান্যতা বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে। মনুস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রে হিন্দু বিবাহের বিস্তৃত পরিসরে প্রকার রীতির মাধ্যমে ইস্পাত কঠিন রজ্জু দ্বারা বিবাহ বন্ধন বেঁধে রাখার নির্দেশ আছে। ‘ব্রাহ্ম’, ‘দৈব’, ‘আর্য’, ‘প্রজাপত্য’, ‘অসুর’, ‘রাক্ষস’, ‘পৈশাচ’ ও ‘গান্ধর্ব’-এই আট ধরনের বিবাহব্যবস্থা থাকলেও ব্রাহ্মবিবাহকেই অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

ধর্মশাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী নিজ বর্ণের মধ্যে বিবাহ অগ্রাধিকার হলেও অন্য বর্ণের সাথে বিবাহের অধিকার বলেও স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রকৃতভাবে সব সংস্কৃতিতেই বিয়ের উদ্ভব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিজস্ব তত্ত্ব আছে। ইসলাম ধর্মে বিবাহ একটি আইনগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধান। ইসলামে বিবাহের বর্ণনা ও বিশ্লেষণে দেখা যায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও ধর্মীয়ভাবে নির্ধারিত একটি বস্তুনিষ্ঠ চুক্তি ‘বিবাহ’। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক স্থাপিত হওয়া এই চুক্তিপত্র কাবিননামা নামে পরিচিত। সমকালের প্রেক্ষাপটে আর্থসামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কাবিননামায় স্বামী কর্তৃক প্রদেয় মোহরানার পরিমাণ উল্লেখ থাকে। স্ত্রীর বিশেষ অধিকার দেনমোহর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বা নগদ এবং বাকি থাকা অবস্থায় স্বামীকে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

হিন্দু ধর্মেও পণপ্রথা একটি স্বীকৃত রীতি। যা বরপক্ষ কনের পক্ষকে নগদ অর্থ প্রদানের প্রাচীন ব্যবস্থা। বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম সমাজের মনোভঙ্গির বিভিন্নতার আলোকে বিবাহ ব্যবস্থায় পণ ও যৌতুক প্রথা বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে ‘যৌতুক’। অসহায় আত্মসমর্পিত যৌতুক ব্যবস্থা এখন একটি বড় সামাজিক ব্যাধি। এই জন্য কন্যা সন্তান জন্ম নিলেই মা বাবার বুকের ভেতরে ঝড় ওঠে। ক্রমেই সক্রিয় হয়ে ওঠে যৌতুক নামের অভিশপ্ত ব্যবস্থা।

যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যাতায়াত ব্যবস্থা করতে অভিভাবকদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সেখানে আবার অযাচিত, অনির্ধারিত যৌতুক স্বভাবতই অভিভাবকের অনুভূতিতে খোঁচা দেয়। শুরু হয় কন্যা সম্প্রদান চিন্তা। পরিণত বয়স হওয়ার আগে বিবাহ। বাল্যবিবাহ এবং তা ইতিহাসের অংশ হয়। পুরো জাতির শিরায় শিরায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। উনবিংশ শতাব্দীতে বাল্যবিবাহবিরোধী সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি হয়, নানা টালবাহানা শেষে-১৮৭২ সালে হিন্দু বিবাহ আইন পাশ হয়।

বয়সের আদ্যোপান্ত বিবেচনা করে বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের জন্য ১৪ এবং ছেলেদের জন্য ১৮ ধার্য্য করা হয়। এরপরও হেঁয়ালিপনা নিয়ে চলছিল বাল্যবিবাহ। ১৯২১ সালে হয় আদমশুমারি। এখানের রিপোর্টে আফসোসের সাথে দেখা যায়, বিয়ের সময় মেয়েদের ১২ এবং ছেলেদের ১৩ গড় বয়সে বিয়ে হচ্ছিল। বাল্যবিবাহ নিরোধ নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীদের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করা হয়। এই আইনে ১৪ বছরের নিচের মেয়ে এবং ১৮ বছরের নিচের ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়।

অনাদিকাল থেকে সমাজকে আলোড়িত করা বাল্যবিবাহ ব্যবস্থার নতুন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার নতুনভাবে চিন্তা করে। পুরনো আইন রদ করে প্রণয়ন করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭। এতে ছেলের বয়স ২১ আর মেয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হয়। মর্মসন্ধানী এই আইনে অনেক কঠোর-কঠিন নিয়মনীতি অবলম্বন করা হয়। বাল্যবিবাহ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার করা হয়। ‘বর আসবে এখনি, নিয়ে যাবে তখুনি এই আপ্তবাক্যকে অসার প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। এরপরও কালপরিক্রমায় বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান দেশ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতি ৩টি বিয়ের মধ্যে দু’টিই হয়েছে বাল্য বিয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের আখ্যানধর্মী রিপোর্টে দেখা যায়, ১৮ বছরের বয়সের নিচে বিয়ে হয়েছে, গর্ভধারণ করেছে এবং সন্তান জন্ম দিয়েছে এমন মেয়ের হার ৫১ শতাংশ।

বাংলাদেশের জন্মহার হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ আর অল্পবয়সে সন্তান ধারণকেই প্রবল বাধা বলে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিস অ্যান্ড হেলথ সার্ভের পরিচালিত জরিপে দেখানো হয়েছে। প্রচলিত আইনে বিয়ে বিষয়ে নানা ধরনের কঠোর-কঠিন শাস্তিযোগ্য বিধান থাকলেও বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ে মানব অস্তিত্বের “জিয়ন কাঠি”। বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সমাজ-স্বীকৃত এবং আইনগত দায়িত্ববোধের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় বৈধভাবে সন্তান-সন্তানাদির জন্ম দেওয়া। বিয়ে ব্যবস্থার লড়াই আসলে বহুমুখী।

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে, পরিবারে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে পরিকল্পিত বিবাহ, শিশু বিবাহ, বহু বিবাহ জোরপূর্বক বিবাহ সেই সব সংস্কৃতির ঐতিহ্য বলে মান্য করা হতো। এই সব ঐতিহ্য এখন হতশ্রী। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। বিয়ে এখন বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতেই পরিমিতবোধের। নির্দিষ্ট করা আইনের বাইরে নড়াচড়া করার উপায় নেই।

মানুষের দাম্পত্য জীবনযাপন প্রণালী এখন আইনী কাঠামোর ছায়ায় দাঁড়িয়ে। এরপরও বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থার দুঃচিন্তার কারণ হয়ে- অনেক রাষ্ট্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থায় অসম বিবাহ ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিচ্ছে। আইনগত স্বীকৃতি পেয়ে বংশ বিস্তার ও উত্তরাধিকারের সুযোগ পাচ্ছে। অতি সাম্প্রতিককালে সমলিঙ্গীয় সর্বনাশা বিবাহ ব্যবস্থার উপর প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে শ্রদ্ধাশীল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করছে।

বিবাহরীতির প্রীতির বাসরঘরে কালসাপ ঢুকে পড়েছে। খ্যাতিমান লোকসংগীত গায়িকা ফরিদা পারভিনের ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘প্রেমের কি স্বাদ আছে বলো’-কে অভিশপ্ত করছে। বেদনার করুণ রসে আচ্ছাদিত করছে বিবাহের উষ্ণ পরশকে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বদৌলতে বিয়ের যে অদ্ভুত নিয়মনীতি তা প্রকাশ্যে আসছে। ডিজিটাল প্লাটফরম, ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব আবিস্কারের সবকিছুই যেমন পরিস্কার হয়েছে, জানাশোনার পরিধি বেড়ে গেছে। এর আগেও কোনো না কোনোভাবে মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার সুযোগ ছিল।

উনবিংশ শতাব্দীতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের ফলে পারিবারিক মূল্যবোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। বিবাহ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের পারস্পরিক নৈতিকতা বোধ, পবিত্রতা ও ঔচিত্য বোধের উন্নয়ন-অর্জন ঘটে। তত্তগতভাবে নানা ধর্মের নানা বিধি-বিধান থাকলেও তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন দ্বারা সজ্ঞায়িত হতে থাকে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে অনেক দায় ও অধিকারের আইনীভিত্তি লাভ করে।
বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে মুখ্য হলেও বিয়ের স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।

স্ব-ঘোষিত আর স্ব-ভূষিত দাম্পত্য আকারে-ইঙ্গিতে নয়; আইনিভাবে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিধান অনুযায়ী মুসলিম প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। ২০১৩ সালের হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালার আলোকে হিন্দু বিবাহ আইন কাঠামোয় আনা একটু ধীরস্থিরভাবে হলেও তা বাধ্যতামূলকের পর্যায়ে যাচ্ছে। দেশের ভেতরে জীবনযাপনের বেলায় এই আইন মাটিচাপা দিয়ে রাখলেও বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক। বিয়ের সনদ, নিকাহনামা প্রদর্শনে বেখেয়ালের সুযোগ নেই।
বিয়ে হোক আর বিবাহ হোক কিংবা শুভ বিবাহ শব্দের অর্থ পূর্ণিমার সন্ধ্যার মতো মোহময়। কাউকে বহন করে আনা-বিবাহ তিল তিল করে গড়ে ওঠা সমাজের ক্ষুদ্রতম একক গঠনে বিশাল বটবৃক্ষের মতো মায়াবী ছায়া দেয় সমাজে। বাস্তব ও স্বাভাবিক প্রবাদ- যার বিয়ে তার খোঁজ নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই।

আনন্দ-বেদনার মিশ্র অনুভূতিতে সৃষ্টি বিবাহকে সহজ ও সাম্যের কাতারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে পালিত হয় ‘বিশ্ব বিবাহ দিবস’।
আমেরিকান সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ম্যারেজ এনকাউন্টার’ দ্বারা শুরু যুক্তিগ্রাহ্য এই দিবস। বিবাহিত জীবনে পারস্পরিক বিশ্বস্ততা, ত্যাগ এবং আনন্দময় সৌন্দর্যকে সম্মান জানিয়ে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালন করা হয় এই দিবস। আত্মভাবনার প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশেষ বৈচিত্র্যে ‘বিশ্ব বিবাহ দিবস’ এগিয়ে যাবে এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হই। লেখক-খন রঞ্জন রায়,বিশিষ্ঠ প্রবন্ধিক