ক্রীড়া প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের বনেদি ক্রিকেট পরিবারে জন্ম নাফিস ইকবালের। চাচা আকরাম খান ছিলেন জাতীয় দলের সফল অধিনায়ক। তার নেতৃত্বেই আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। যার সুবাদে ওয়ানডে স্ট্যাটাসও পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। শুধু তাই নয়, দেশের হয়ে প্রথম টেস্টও খেলেছেন তিনি। এ পর্যন্ত দেশের যে ৯৯ জন টেস্ট ক্রিকেটারের তালিকা রয়েছে, সেই তালিকার এক নম্বরে রয়েছে আকরাম খানের নাম। এমন চাচার যোগ্য ভাতিজা হিসেবে দেশের ৩৮ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পড়েছেন নাফিস। চাচার মতো নাফিস ইকবালও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। চট্টগ্রামের এই খান পরিবারের আরেক সদস্য হলেন তামিম ইকবাল। যিনি ইতোমধ্যেই জাতীয় দলের হয়ে চাচা আকরাম খান ও বড় ভাই নাফিস ইকবালকে ছাড়িয়ে গেছেন পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়িয়ে। তামিম দেশের ৫০তম টেস্ট ক্রিকেটার। চাচা ও বড় ভাইয়ের মতো দেশের হয়ে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলার পাশাপাশি তামিম টি২০ ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে সমুজ্জল। এমন বনেদি ক্রিকেট পরিবারের সদস্য হয়েও নাফিস ইকবালের ক্রিকেট ক্যারিয়ার খুব বেশি সুখকর নয়। অথচ, দুর্দান্ত কিছু পারফরম্যান্স দিয়েই ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল নাফিস ইকবালের।
২০০৩ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে মাঠে নেমে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকান নাফিস। এই সেঞ্চুরির পর ইংলিশ মিডিয়ায়ও তাকে নিয়ে হইচঁই পড়ে যায়। এই সেঞ্চুরির সুবাদেই ২০০৩ সালের ওই সফরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় নাফিস ইকবালের। ঘরের পাশের চিরচেনা চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে অবশ্য নয় রান করেই আউট হয়ে যান ওপেনার নাফিস ইকবাল। পরের বছরই ঢাকা টেস্টে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। ইনজুরির কারণে জাতীয় দলের হয়ে বেশি দিন খেলার সুযোগ পাননি নাফিস ইকবাল। মাত্র তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১১টি টেস্ট ও ১৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এরমধ্যে ১১ টেস্টে ২৩.৫৪ গড়ে ৫১৮ রান করেছেন। টেস্টে একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি ফিফটি রয়েছে তার। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১২১ রানের ইনিংসটি খেলেছেন তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে। ১৬টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৯.৩১ গড়ে ৩০৯ রান করেছেন নাফিস। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাননি। তবে দু’টি ফিফটি রয়েছে তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বল্প সময়ের পদচারণায় ২০০৫ সালটাকে আলাদাভাবে মনে রাখবেন নাফিস।
২০০৫ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৬ রান করে দলের এই ঐতিহাসিক জয়ে অবদান রেখেছিলেন নাফিস ইকবাল। তাছাড়া দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের স্কোয়াডে থাকার গর্বটাও যে অন্যরকম! সেইসঙ্গে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের ওই টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে নিশ্চিত হার থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন নাফিস। ওই টেস্টে ৪৭০ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৩৫৫ বলে ১৮টি বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ার সেরা ১২১ রান করেন নাফিস ইকবাল। তার এই সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচটি ড্র হয়। আর ১-০ তে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ দল। এছাড়াও ২০০৫ সালেই ইংল্যান্ডের কার্ডিফে ওয়ানডে ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে যে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ দল সেই দলেরও গর্বিত সদস্য ছিলেন চট্টগ্রামের সন্তান নাফিস ইকবাল।
২০০৬ সালের পর ইনজুরির কারণে জাতীয় দলের বাইরে চলে যান নাফিস ইকবাল। টানা আড়াই বছর মাঠেরই বাইরে ছিলেন। এরপর ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভালো পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে আর সুযোগ পাননি। এ কারণে নাফিসের মায়ের একটি স্বপ্ন অপূরণই রয়ে গেছে। তা হলো- টেস্ট ক্রিকেটে ওপেন করতে নামবেন তার দুই সন্তান নাফিস ও তামিম! তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই নাফিস ইকবালের। ‘মায়ের ওই স্বপ্নটা পূরণ হলে খুবই ভালো লাগতো। তবে এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। খান পরিবারের আমরা তিন সদস্য টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি। এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়াটা স্বপ্ন ছিল। সেটি করতে পেরে দারুণ লেগেছে। যখনই যেখানে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পেয়েছি, তখনই চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার জন্য।
কিন্তু ইনজুরির কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশি দিন খেলার সুযোগ হয়নি। সুপ্ত অভিমানের কথা জানিয়ে নাফিস ইকবাল বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল আবার যদি জাতীয় দলে সুযোগ পেতাম, তাহলে সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলে আর ফেরা হয়নি। এখন আর ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে মাঠে নামার চিন্তা করছি না। তাই বলতে পারেন ক্রিকেটকে অঘোষিত বিদায় জানিয়ে দিয়েছি।