নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের ভেতরে বাইরে ওঁৎপেতে থাকা দালালদের চেনা বড় দায়। কমিশনের লোভে হাসপাতালে আসার পথে কিংবা ভেতর থেকে রোগীদের উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে সদর হাসপাতালে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়ে যায় দালালরা। তাদের খপ্পরে পড়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা অহরহ। এদিকে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দালালদের তৎপরতা বন্ধে প্রায় সময় অভিযান চালানো হয়। তারপরও হাসপাতাল থেকে সক্রিয় দালালদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ বলে মনে করছেন রোগীর স্বজনরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদর হাসপাতালে দালালদের উৎপাতের কারণে প্রতিদিন বড় অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এমনকি সদর হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা ১৫ থেকে ২০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আয়ের উৎস এই হাসপাতাল। দালালদের কারণে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় ও দরিদ্র মানুষগুলো সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন অনেকেই। বছরের পর বছর ধরে চলছে দালালদের এসব তৎপরতা।
অনেক ভুক্তভোগীরা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটা একটা বড় সিন্ডিকেট। তবে আগের চেয়ে কমেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড, এবং এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা কক্ষের সামনে হাসপাতালের কর্মচারী নন- এমন বিভিন্ন শ্রেণির দালাল ঘোরাঘুরি করছেন। এদের কেউ কেউ নিজেদের হাসপাতালের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শহরের মোহাজের পাড়ার ‘জসিম’ নামে এমন একজনের সঙ্গে দেখা হয় প্রতিবেদকের।
পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সদর হাসপাতালের স্টাফ। কোন বিভাগের জানতে চাইলে প্রতিবেদকের এই প্রশ্নে জসিম দ্রুত সেখান থেকে শটকে পড়েন। জসিমের মতো অনেকে স্টাফ পরিচয়ের পাশাপাশি কেউ কেউ নিজেদের বিভিন্ন চিকিৎসকদের সহকারী পরিচয় দেন। তাঁর সিন্ডিকেটের মোহাজের পাড়ার জহির উদ্দীন ও আয়ুব কিছুক্ষণ আগেই সেখান থেকে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, সদর হাসপাতালের আশপাশের যেসব বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালের পরিচয়ে কমিশনের আসায় সদর হাসপাতালের বাইরে ওঁৎ পেতে থাকে দালাল। তারা রোগীদের টার্গেট করে সদর হাসপাতাল ভাল চিকিৎসা নেই বলে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এসব দালাল সিন্ডিকেটের সদস্য হাসপাতালের বাইরে প্রতিনিয়তই অবস্থান করে। তাদের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের সামনে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন এক যুবক। কৌতূহল নিয়ে ওদের কাছাকাছি যান প্রতিবেদক। ওরা চট্টগ্রাম যাবেন। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছে ৬ হাজার টাকায়। কথা ছিল এসি থাকবে। অ্যাম্বুলেন্সের লোক বলছেন, এসি নষ্ট। যুবককে ৪/৫ জন মিলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে যুবক তার বাবাকে ‘নন এসি’ অ্যাম্বুলেসে উঠালেন।
জানা গেছে, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, হাসপাতালে ভর্তি, বেড বা কেবিন পাওয়া, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এসব বিষয়ে রোগী বা রোগীর স্বজনদের দালাল খুঁজতে হয়না। দালালরাই রোগীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। পুরো হাসপাতালজুড়ে রয়েছ এদের অবাধ বিচরণ। ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের সামনে সড়কের উপর পার্কিংয়ে অসংখ্য বেসরকারি কোম্পানির অ্যাম্বুলেন্স রাখা।
সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ রিপন বলেন, এখন কোন রোগী ও স্বজনরা দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়নি। দালাল ঠেকাতেই আমরা হাসপাতালে নিয়োজিত আছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সুমন বড়ুয়া বলেন, পূর্বে দালাল থাকলেও অভিযানের পর থেকে দালালের সংখ্যা কমে গেছে। এরপরেও যদি দালালদের বিচরণ থেকে থাকে প্রয়োজনে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আবারো অভিযান চালানো হবে।