দেশে গতিধারা পাল্টে গেছে দেশের নির্বাচন পদ্ধতির । এক সময় নির্বাচন ছিল খুবই উৎসব মুখর। এখন হয়ে গেছে ভীতি-আতঙ্ক-প্রাণহানি আর বিশেষ মার্কার প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। ভোট দিলে ফলাফল পাল্টে যাবে এমন ধারণা থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়েছে রীতিমতো। আবার এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ঘরে বসে থাকলেও ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেনই আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী। প্রতি দফার এই নির্বাচনে রক্ত ঝরছে, প্রাণ হারিয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ। অথচ সিইসি কে এম নুরুল হুদার স্পষ্ট বক্তব্য নির্বাচনী সহিংসতা, রক্তারক্তি ও প্রাণহানির দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রাণহানির দায় কার? তাছাড়া সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ইমেজ যখন তলানীতে; তখন ইসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঝগড়াবিবাদ করছেন।
আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে দলীয় মনোনয়ন বিক্রয় বানিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের ত্যাগী প্রার্থীরা নিগৃহীত ও মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছে তাদেরই কারণে। এদের পরিবার পরিজনরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। তাদের অত্যচার নিপীড়নে আসল আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারিয়ে যাচ্ছে। এরা গুটি কয়েক এবং চিহ্নিত। এদের এ হেন নিলজ্জ মনোনয়ন বানিজ্যই এক সময় আওয়ামী লীগকে ডুবাবে।
নির্বাচন কমিশন থেকে বেতন ভাতা কারা নেন? এদের লজ্জা-শরম নেই। কেউ ব্যর্থ হতে পারে; তার মানে এই নয় নিজের দোষ শিকার করা যাবে না। দায়িত্বশীলরা যখন নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণে ব্যর্থ হয় তখন এই নির্বাচন কমিশন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপায়। বর্তমান নুরুল হুদা ও আগের কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার হরণ এবং দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করায় এদের বিচার হওয়া উচিত।
নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের এখন বেহাল অবস্থা। নির্বাচনে যেনতেনভাবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল ছাড়াও দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইসির ওপর আস্থা না থাকায় নির্বাচন বর্জন করছেন। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বোত্রই নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্ব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তখন ইসির দায়িত্বশীলরা নিজেদের সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা ভুলে তর্কাতর্কিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ইমেজ তলানিতে নিয়ে গেছেন সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন ও বর্তমান সিইসি নুরুল হুদা কমিশন।
নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন খুবই অসহায়। তাদের যে ফলাফল ধরিয়ে দেয়া হয়, তারা তাই ঘোষণা করে। কোথাও কোথাও প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। নির্বাচন ব্যবস্থা এ ভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে এক সময় রাজনীতি আর রাজনৈতিক দলগুলো হারিয়ে যাবে।