নিজস্ব প্রতিবেদক: রাত পোহালেই অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৪৫ টি কেন্দ্র ঝুঁকিতে। ১০ টি কেন্দ্রের ঝুঁকির ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
অন্যদিকে রায়পুর ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্র নিয়ে তীব্র ঝুঁকির আশঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান, ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আমিন শরীফ ও চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন।
গত ১ জানুয়ারি আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে এই দুই প্রার্থী লিখিতভাবে এ দাবি জানান।
লিখিতপত্রে তারা জানিয়েছেন, আসন ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা দুইজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অপর একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ জানে আলম অবৈধভাবে ২, ৩, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। জানে আলমের সমর্থকরা ভোটারদের ওই কেন্দ্রে না যেতে বলছেন। এছাড়া জোরপূর্বক কেন্দ্র ৪টি দখল করবেন বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন।
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জানে আলমের হুমকিতে এলাকার সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউএনও’র কাছে পত্রে প্রার্থী আমিন শরীফ ও ফরিদ উদ্দিন নির্বাচনের আগে কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রতিকেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার সাথে উল্লেখিত ৪টি কেন্দ্র অন্তর্ভূক্ত করে নিয়ে সর্বাত্মক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবো।
অন্যদিকে আনোয়ারা ১নং বৈরাগ, ৪নং বটতলী, ৬নং বারখাইন, ৮নং চাতরীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নৌকা জয়ের হ্যাটট্রিকের সূচনা ঘটলেও সদস্য পদপার্থীদের মধ্যে মাঠ উত্তাপ চড়াচ্ছে। গত ২ জানুয়ারী ১নং বৈরাগ ইউনিয়নের ৮ নং পূর্ব বৈরাগের তিন মেম্বার প্রার্থী নিরাপত্তার দাবিতে উপজেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করেন। ৬নং বারখাইনের শোলকাটা, হাজীগাঁও, শিলাইগড়া কেন্দ্রগুলোতে মেম্বার পদপার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি “মেম্বারের ভোট বুথে দেবেন, নৌকার ভোট টেবিলে দেবেন । যারা বুথে দেবেন , এজেন্টরা তাঁদের তালিকা করবেন । পরদিন আমাকে দেবেন । আমি মিটিং করে বলে দেব।’ এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে বারশত ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম এ কাইয়ুম শাহ’র বিরুদ্ধে । ইউনিয়নের দুধকুমরা গ্রামের এক উঠান বৈঠকে গত রবিবার রাতে তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে জানা যায়। টেবিলে ভোট দেওয়ার নির্দেশনা সংবলিত বক্তব্য গত সোমবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মো . মমিনুর রহমানের কাছে পাঠান ইউনিয়নের এক ভোটার । জেলা প্রশাসক ভিডিও দেখার পরপরই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন । তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানা যায়নি।
উপজেলার ১নং বৈরাগে ৬টি, ২নং বারশতে ৫টি, ৩নং রায়পুরে ৫টি, ৪নং বটতলী ৩টি, ৫নং বরুমচড়া ৭টি, ৬নং বারখাইনে ৪টি, ৭নং আনোয়ারায় ৪টি, ৮নং চাতরী ৩টি, ৯নং পরৈকৌড়া ৫টি, ১০ নং হাইলধরে ৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
আনোয়ারা ৭নং সদরের নৌকা সমর্থক অসীম দেব জানান, তার কর্মীদের উপর তার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার-মাইকিংয়ে বাধাগ্রস্ত করছিল। পাল্টাপাল্টিতে এসব অপপ্রচার ও জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোট কেন্দ্রে যেন ভোটাররা উপস্থিত না থাকে তার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে হুশিয়ারী করেন বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল আলম টিপু।
তিনি আরো জানান, এসব অপপ্রচারে জনগণকে ধমানো যাবে না। নির্বাচনে ব্যালট বক্সে বুঝিয়ে দিবে জনগণ।
উল্লেখ্য রাত পোহালেই আনোয়ারা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। আপিল হয়েছে ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি হয় ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ছিল ১৫ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এবার ৯০ কেন্দ্রে মোট ভোট দেবেন ১৯৫৪৫০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০২৯৯০, নারী ভোটার ৯২,৪৬০।