নিজস্ব প্রতিবেদক: রাউজান উপজেলা সদরের রাউজান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের রাউজান আর আর এ সি সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে রাউজান ডাকবাংলো ভবনের পুর্ব পাশে শহীদ জাফর সড়কের পাশে অবস্থিত সুলতানপুর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল । হাসপাতালের ভবন ও হাসপাতালের চিকিৎসার সরঞ্জাম থাকলেও নেই চিকিৎসা । হাসপাতালে এলাকার লোকজন চিকিৎসা নিতে আসলে পায়না চিকিৎসককে ।
গত ১৯৯৮ সালে রাউজান আর আর এ সি সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী শেখ ফজুলল করিম সেলিম প্রধান অথিথি হয়ে আসেন। ঐ সময়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী রাউজান সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে হাসপাতাল করার দাবী জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী শেখ ফজুলল করিম সেলিমকে ।
স্কুলের শতবর্ষ পূতি অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে ৩১ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ করার ঘোষনা দেয় । পরবর্তীতে সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য মন্ত্রী শেখ ফজুলল করিম সেলিম ৩১ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দেয় । সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমির পাশে এলাকার লোকজন হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি দান করেন । স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চারতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করেন । চিকিৎসক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী ২০০২ সালে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপতালের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
হাসপাতাল উদ্বোধনের পর হাসপতালের জনবল নিয়োগ না পাওয়ায় ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালু হয়নি । পরবর্তী তত্ববধায়ক সরকারের শাসন আমলে হাসপতালের শয্যা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করা হয় । পরবর্তী সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য নিয়োজিত চিকিৎসকসহ আরো কয়েকজন চিকিৎসক নার্স দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চালু করে। ওয়ার্ডের শয্যায় রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় । পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
করোনার ভাইরাসের প্রাদুভার্ব চলাকালে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করে রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আর্থিক সহায়তায় চিকিৎসা সেবা চালু করেন। বর্তমানে সুলতানপুর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসক থাকলে ও এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পায়না। হাসপাতালের আউটডোর চালু করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দরিদ্র পরিবারের লোকজন চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসককে না পেয়ে ফিরে যায় । সকালে হাসপাতাল খুলে আউটডোর চালু করা হলে ও চিকিৎসক নিয়মিত না আসায় এলাকার দরিদ্র জনগোষ্টি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মাঝে মধ্যে চিকিৎসক হাসপাতালে আসলেও হাসপাতালে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা হাসপাতালের দায়িত্ব পালন না করে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় ডায়গনেষ্টিক সেন্টারে তাদের চেম্বারে বসে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট চিকিৎসা করার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন ।
আজ রবিবার(২ জানুয়ারী ) দুপুর একটার সময়ে এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে দেখা যায় হাসপাতালের গেইট বন্ধ। হাসপাতালের ভেতর আয়া রুনু দাশ ছাড়া আর কেউ নেই । চিকিৎসকের অফিসের দরজা ও তত্ব¦ধায়কের অফিসের দরজায় তালা লাগানো ।
হাসপাতালের আয়া রুনু দাশের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, তিনজন চিকিৎসক এসেছে তারা দুপুরে খাওয়ার জন্য চলে গেছে । দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর হাসপাতালে কোন চিকিৎসক না আসায় আয়া রুনু দাশের কাছে চিকিৎসক আসবে কিনা জানতে চাইলে, আয়া রুনু দাশ বলেন, দুপুর ২টার পর থেকে হাসপাতাল বন্ধ। চিকিৎসক আর আসবেন না ।
এ ব্যাপারে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ শান্তনু পালিতের কাছে ফোন জানতে চাইলে, তিনি বলেন, সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছে চারজন চিকিৎসক। চারজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন মহিলা চিকিৎসককে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অবশিষ্ট ৩ জন চিকিৎসক সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতালে আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। দুপুরে হাসপাতাল বন্ধ কেন জানতে চাইলে, দয়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ শান্তনু পালিত বলেন, জনবল না থাকার কারণে দুপুর ২টার পর সুলতানপুর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল বন্ধ থাকে ।
এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুর আলম দীনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতাল বন্ধ রাখা হয়েছে । শুধুমাত্র সকালে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা আউটডোরে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন ।
সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতাল বন্ধ থাকায় রাউজান উপজেলা সদর ও উত্তর রাউজানের দরিদ্র পরিবারের লোকজন বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হলে বাড়ীর পাশে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসাপতাল ফেলে চিকিৎসার জন্য রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে হয়। অপরদিকে এলাকার কিছু লোকজন বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতাল বন্ধ থাকায় রাউজানের নোয়াপাড়া ও গহিরা হাটহাজারী বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করতে হয় । কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এলাকার মানুষের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের পর থেকে যুগ যুগ ধরে পড়ে থাকবে। সুলতানপুর ৩১ শয্যা হাসপাতাল কবে চালু হবে । কবে পাবে দরিদ্র জনগোষ্টি চিকিৎসা সেবা এই প্রশ্ন এলাকার মানুষের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে ।