সংকলন – আমেনা বেগম:
আতসবাজির মাঝেও আছে রসায়নের খেলা।
বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হল রসায়ন। কোনবস্তু কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি এবং উপাদানগুলো কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে রসায়ন গবেষণা করে। আমাদের এই মহাবিশ্বে পদার্থের নিরন্তর পরিবর্তন এবং এসকল রূপান্তরের উপায়গুলো নিয়ে রসায়ন কাজ করে। তাই রান্না করা এবং বরফ তৈরিতে রসায়নের যেমন ভূমিকা আছে তেমনি রয়েছে ওষুধ এবং রং প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও।

যারা রসায়নে কাজ করেন তাদের রসায়নবিদ বা কেমিস্ট বলা হয়। রসায়নবিদরা পদার্থের গঠন নিয়ে কাজ করেন – মহাবিশ্বের যা কিছু আছে সবই পদার্থ। বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একত্রিত হলে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে তাও অধ্যয়ন করেন রসায়নবিদগণ। এই পরিবর্তনগুলিকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলা হয়।

এছাড়া, রসায়নবিদরা নতুন পদার্থ তৈরি করে। তারা প্লাস্টিক, ফাইবার, নির্মাণ সামগ্রী, ওষুধ এবং অন্যান্য অনেক পদার্থ তৈরি করেছে যা দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

রসায়নের অনেকগুলো শাখা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জৈব রসায়নবিদরা শুধুমাত্র কার্বনের যৌগসমূহ নিয়ে কাজ করেন আর ভৌত রসায়নবিদরা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পদার্থের পরিবর্তনের উপায় নিয়ে গবেষণা করেন। অন্যদিকে,বায়োকেমিস্টগণ প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন জিনিষের রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি অধ্যয়ন করে।

রসায়নের জনক কে?
প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে ১৬০০ দশকে রসায়ন অধ্যয়ন শুরু হয়। ১৬৬১ সালে রবার্ট বয়েল নামে একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাসায়নিক উপাদানগুলোকে সাধারণ মৌলিক পদার্থ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৭৭০ এর দশকে অ্যান্টোনি ল্যাভয়েসিয়ে নামে একজন ফরাসি রসায়নবিদ রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছিলেন। এজন্য তাঁকে রসায়নের জনক বলা হয়। তিনি ১৭৮৭ সালে ‘এলিমেন্টস অভ কেমিস্ট্রি’ বইটি লিখেন।
এছাড়া, পারস্যের আলকেমিস্ট জাবির ইবনে হাইয়ানকেও রসায়নের জনক বলা হয়। তিনি ৭২১ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর গবেষণায় বৈজ্ঞানিক নীতি প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি পদার্থের ‘পরিমাণগত’ বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তাঁকে আধুনিক ফার্মেসির (ঔষধ প্রস্তুতকরণ, সংরক্ষণ ও মিশ্রণের জ্ঞান) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলা হয়।

১৮০০ এর দশকের প্রথম দিকে জন ডাল্টন নামে একজন ব্রিটিশ রসায়নবিদ আবিষ্কার করেন যে প্রতিটি উপাদানের নিজস্ব ধরণের পরমাণু রয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য রসায়নবিদরা ১৮০০ এর দশকে অনেক নতুন উপাদান আবিষ্কার করেছিলেন।
আধুনিক রসায়নের জনক হিসেবে পরিচিত অন্যান্যরা হলেন রবার্ট বয়েল, বারজেলিয়াস এবং জন ডাল্টন।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কী?
রাসায়নিক বিক্রিয়া হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে এক বা একাধিক পদার্থ রুপান্তরিত হয়ে ভিন্ন এক বা একাধিক পদার্থ তৈরি করে। বিক্রিয়ায় শুরুর পদার্থের পরমাণুগুলি পুনরবিন্যাস্তহয়ে ভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন পদার্থ গঠন করে। তবে, বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার আগে এবং পরে পরমাণুর সংখ্যা এবং ভরের পরিমাণ একই থাকে। তাই তাদের ভরের কোন পরিবর্তন হয় না।

কোথায় ঘটে রাসায়নিক বিক্রিয়া?
মনে হতে পারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুধু ল্যাবরেটরিতে ঘটানো হয়। সেখানে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। প্রকৃতপক্ষে, বিক্রিয়া আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘটছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, এমনকি জীবনেরই একটি অংশ। জ্বালানী পোড়ানো, লোহা গলানো এবং পাউরুটি বেক করার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। আমাদের পরিপাকতন্ত্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় খাদ্য থেকে গ্লুকোজ এবং অন্যান্য উপাদানের অণু সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে কোষ দ্বারা শোষিত হয়। তারপরে গ্লুকোজটি দেহের কোষ পর্যায়ে আবারও ভেঙে গিয়ে রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন করে। এ শক্তি দেহে জ্বালানী হিসেবে কাজ লাগে। পুরো প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে।
তবে, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়া হলো সালোকসংশ্লেষণ, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জীবকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সালোকসংশ্লেষণে উদ্ভিদ, শৈবাল এবং নির্দিষ্ট কিছু অণুজীব সূর্য থেকে আলোক শক্তিকে খাদ্যের রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কিভাবে ঘটে, কেন ঘটে?
যখন দুই বা ততোধিক পদার্থ একসাথে মিশে একটি নতুন উপাদান তৈরি করে তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। মেশানো পদার্থগুলোর কিছু বিকারক এবং আর কিছু বিক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। বিক্রিয়ার ফলে এরা উভয়ে পরস্পর পরস্পরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে নতুন কিছু তৈরি করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে কত সময় লাগে?
যদিও কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটতে পারে (যেমন একটি বিস্ফোরণ) অন্যান্য রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে অনেক সময় লাগে, যেমন লোহায় জং ধরা।
যে হারে একটি বিক্রিয়া ঘটে তাকে বিক্রিয়ার হার বলে। তবে নানাভাবে বিক্রিয়ার হার পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিক্রিয়ায় তাপ, সূর্যালোক কিংবা বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে বিক্রিয়ার হার বাড়ানো যায়।
আবার এ শক্তিগুলোর অনুপস্থিতি বিক্রিয়ার হার কমিয়ে দিতে পারে।
তাছাড়া, বিকারকের পরিমাণ বিক্রিয়ার হারকে পরিবর্তন করে। বিকারকের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হলে দ্রুত বিক্রিয়া ঘটে।
এছাড়া, বিক্রিয়ায় তৃতীয় পদার্থ ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি পরিবর্তন করা যায়। যদি এই অতিরিক্ত পদার্থটি একটি বিক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, তবে এটিকে ইনহিবিটর বলা হয়। আর যদি এটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়, তবে এটিকে অনুঘটক বলা হয়।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কত ধরণের?
বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া রয়েছে। এগুলো প্রকৃতি পরিবেশে কিংবা কৃত্রিম ভাবে ল্যাবরেটরি- উভয় ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

সংশ্লেষণ বিক্রিয়া
যখন দুটি পদার্থ একসাথে মিশে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে তখন এই ধরনের বিক্রিয়া ঘটে।

বিয়োজন বিক্রিয়া
এটি সংশ্লেষণ বিক্রিয়ার বিপরীত। বিয়োজন বিক্রিয়ায় একটি জটিল পদার্থকে একাধিক ভিন্ন পদার্থে করে আলাদা করে দেয়।
দহন
একটি যৌগ অক্সিজেনের সাথে একত্রিত হয়ে যদি পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে তখন একটি দহন বিক্রিয়া ঘটে। দহন বিক্রিয়ার হার অনেক বেশি এবং এসময় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়।

অপসারণ বিক্রিয়া
অপসারণ বিক্রিয়ায় ঘটে যখন এক বা একাধিক যৌগ অন্য যৌগ থেকে একটি উপাদান কেড়ে নেয়। বিক্রিয়ায় এক বা একাধিক উপাদান অপসারিত হতে পারে।

ফটোকেমিক্যাল বিক্রিয়া
এই ধরনের বিক্রিয়া আলো এবং এর ফোটন জড়িত। সবচেয়ে পরিচিত আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া হল সালোকসংশ্লেষণ। সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ খাবার উৎপাদন করে।
গাছের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন সূর্যের আলো।

রাসায়নিক বন্ধন কিভাবে তৈরি হয়?
প্রতিটি উপাদান এবং বস্তু পরমাণু নামক ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। পদার্থের এই ছোট কণাগুলো আবার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন। প্রোটন ও নিউট্রন মিলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ঘটিত হয়। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরে।
প্রতিটি উপাদানের জন্য প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট, যা একটি উপাদানকে অন্য উপাদান থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
একটি পরমাণুর প্রোটন সংখ্যাই পরমাণুটির পারমাণবিক সংখ্যা। পর্যায় সারণীতে পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে পরমাণুগুলোকে সাজান হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা সর্বদা প্রোটনের সংখ্যার সমান।

পরমাণুগুলো আকারে অনেক ছোট এবং এক বা একাধিক ধরণের অনেকগুলো পরমাণু মিলে বড় একটি কাঠামো তৈরি করে। একে অণু বলা হয়।
পরমাণুগুলো রাসায়নিক বন্ধন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অণু তৈরি। রাসায়নিক বন্ধন পরমাণুগুলোকে একসাথে যুক্ত করে রাখে।
পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করে, ঠিক সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে যেমন প্রদক্ষিণ করে। পরমাণুগুলো বিভিন্ন স্তরে ঘুরে, স্তরগুলোকে বলা হয় শেল।
প্রতিটি শেল সর্বোচ্চ একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে। নিউক্লিয়াসের নিকটতম শেলে ইলেকট্রনের সংখ্যা পরিমাণ সবচেয়ে কম এবং দূরবর্তী শেলে ইলেকট্রনের পরিমাণ বেশি থাকে।
পরমাণুগুলো বাইরের শেলটি ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকতে পছন্দ করে, যদিও এটি পরমাণুগুলোতে খুব বেশি ঘটে না। শুধু নোবেল গ্যাসসমূহের বাইরের ইলেকট্রন শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে ।
পরমাণুগুলোর বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকার প্রবণতা রাসায়নিক বন্ধন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ রাখার জন্য পরমাণুগুলো ইলেকট্রন বিনিময় করে।

যে ইলেকট্রনগুলি একটি পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেলে অবস্থান করে এবং রাসায়নিক বন্ধনে অংশ নিতে পারে তারা ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বা বন্ধন ইলেকট্রন নামে পরিচিত। যদি একটি পরমাণুর বাইরের শেল তুলনামূলকভাবে খালি থাকে, তবে পরমাণুটি সেই ইলেকট্রনগুলিকে অন্য পরমাণুকে দিয়ে দিতে চায়।
অন্যদিকে, যদি একটি পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে প্রায়-পূর্ণ হয়, তবে এটি কিছু ইলেকট্রন অর্জনের দিকে নজর দেবে। এর মাধ্যমে পরমাণুটির সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে। এভাবে রাসায়নিক বন্ধনের অংশগ্রহণকারী উভয় পরমাণু বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হয়।
লাল রঙের পরমাণুগুলোর দু’টি হাত দিয়ে দু’টি কালো রঙের পরমাণু হাত ধরে রেখেছে। এটাই রাসায়নিক বন্ধন (সমযোজী)।

রাসায়নিক বন্ধন কত প্রকার?
সাধারণত দুই ধরণের রাসায়নিক বন্ধন দেখা যায়- সমযোজী বন্ধন ও আয়নিক বন্ধন।

সমযোজী বন্ধন
এই ধরনের বন্ধন প্রক্রিয়ায় দুইটি পরমাণুর কোনোটিই ইলেকট্রন হারাবে না বা লাভ করবে না। বরং তারা তাদের ইলেকট্রন ভাগ করে নিশ্চিত করে যে উভয় পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। সমযোজী বন্ধনে ইলেকট্রন সবসময় জোড়ায় শেয়ার করা হয়।

আয়নিক বন্ধন
একটি আয়নিক বন্ধন গঠিত হয় যখন একটি পরমাণু তার সবচেয়ে বাহিরের অপূর্ণ ইলেকট্রন শেলে থাকা ইলেকট্রন (এক বা একাধিক হতে পারে) অন্য পরমাণুকে দান করে যাতে উভয় পরমাণু বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ অবস্থায় থাকতে পারে।

রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কে ৪টি দারুণ তথ্য
১। নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং শেলের মধ্যে ইলেকট্রনগুলোর মধ্যে আকর্ষণের কারণে অণুর মধ্যে পরমাণুগুলো একসাথে থাকে।
২। নোবেল গ্যাসগুলো (হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন ও রেডন) সাধারণত অন্যান্য পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া দেখায় না কারণ তাদের স্বাভাবিকভাবে বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে।
৩। রাসায়নিক বিক্রিয়া কেন হয়?
যখন দুই বা ততোধিক অণু পরস্পরের কাছাকাছি আসার ফলে অণুগুলি পরিবর্তিত হলে বিক্রিয়া ঘটে। এসময় অণুতে থাকা পরমাণুগুলোর মধ্যকার বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন তৈরি হয়। এতে নতুন অণু গঠিত হয়।
৪। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন হয় কেন?

যখন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তখন বিক্রিয়াস্থলে পরিবেশে হতে শক্তি আসে অথবা বিক্রিয়াস্থল থেকে এর পরিবেশে শক্তি চলে যায়।
যদি দুটি পদার্থ বিক্রিয়া করে এবং মিশ্রণের তাপমাত্রা হ্রাস পায় তবে বিক্রিয়াটি একটি তাপহারী (এন্ডোথার্মিক) বিক্রিয়া।
আবার, যদি দুটি পদার্থ বিক্রিয়া করে এবং মিশ্রণের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে বিক্রিয়াটি একটি তাপোৎপাদী (এক্সোথার্মিক) বিক্রিয়া।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার সময় অণুগুলোর মধ্যে বন্ধন ভাঙা এবং উৎপাদগুলোর বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধন ভাঙতে শক্তি লাগে এবং বন্ধন তৈরি হলে শক্তি মুক্তি পায়।

যদি কোনো বিক্রিয়া তাপহারী বা এন্ডোথার্মিক হয়, তাহলে বিক্রিয়কগুলোর বন্ধন ভাঙতে উৎপাদগুলোর বন্ধন তৈরি হওয়ার চেয়ে বেশি শক্তি লাগে। আবার, বিক্রিয়া তাপোৎপাদী বা এক্সোথার্মিক হলে বিক্রিয়াকদের বন্ধন ভাঙতে যতটা লাগে তার থেকে বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় যখন উৎপাদের বন্ধন তৈরি হয়।

সংকলন – আমেনা বেগম:
আতসবাজির মাঝেও আছে রসায়নের খেলা।
বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হল রসায়ন। কোনবস্তু কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি এবং উপাদানগুলো কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে রসায়ন গবেষণা করে। আমাদের এই মহাবিশ্বে পদার্থের নিরন্তর পরিবর্তন এবং এসকল রূপান্তরের উপায়গুলো নিয়ে রসায়ন কাজ করে। তাই রান্না করা এবং বরফ তৈরিতে রসায়নের যেমন ভূমিকা আছে তেমনি রয়েছে ওষুধ এবং রং প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও।

যারা রসায়নে কাজ করেন তাদের রসায়নবিদ বা কেমিস্ট বলা হয়। রসায়নবিদরা পদার্থের গঠন নিয়ে কাজ করেন – মহাবিশ্বের যা কিছু আছে সবই পদার্থ। বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একত্রিত হলে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে তাও অধ্যয়ন করেন রসায়নবিদগণ। এই পরিবর্তনগুলিকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলা হয়।

এছাড়া, রসায়নবিদরা নতুন পদার্থ তৈরি করে। তারা প্লাস্টিক, ফাইবার, নির্মাণ সামগ্রী, ওষুধ এবং অন্যান্য অনেক পদার্থ তৈরি করেছে যা দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

রসায়নের অনেকগুলো শাখা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জৈব রসায়নবিদরা শুধুমাত্র কার্বনের যৌগসমূহ নিয়ে কাজ করেন আর ভৌত রসায়নবিদরা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পদার্থের পরিবর্তনের উপায় নিয়ে গবেষণা করেন। অন্যদিকে,বায়োকেমিস্টগণ প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন জিনিষের রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি অধ্যয়ন করে।

রসায়নের জনক কে?
প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে ১৬০০ দশকে রসায়ন অধ্যয়ন শুরু হয়। ১৬৬১ সালে রবার্ট বয়েল নামে একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাসায়নিক উপাদানগুলোকে সাধারণ মৌলিক পদার্থ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৭৭০ এর দশকে অ্যান্টোনি ল্যাভয়েসিয়ে নামে একজন ফরাসি রসায়নবিদ রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছিলেন। এজন্য তাঁকে রসায়নের জনক বলা হয়। তিনি ১৭৮৭ সালে ‘এলিমেন্টস অভ কেমিস্ট্রি’ বইটি লিখেন।
এছাড়া, পারস্যের আলকেমিস্ট জাবির ইবনে হাইয়ানকেও রসায়নের জনক বলা হয়। তিনি ৭২১ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর গবেষণায় বৈজ্ঞানিক নীতি প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি পদার্থের ‘পরিমাণগত’ বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তাঁকে আধুনিক ফার্মেসির (ঔষধ প্রস্তুতকরণ, সংরক্ষণ ও মিশ্রণের জ্ঞান) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বলা হয়।

১৮০০ এর দশকের প্রথম দিকে জন ডাল্টন নামে একজন ব্রিটিশ রসায়নবিদ আবিষ্কার করেন যে প্রতিটি উপাদানের নিজস্ব ধরণের পরমাণু রয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য রসায়নবিদরা ১৮০০ এর দশকে অনেক নতুন উপাদান আবিষ্কার করেছিলেন।
আধুনিক রসায়নের জনক হিসেবে পরিচিত অন্যান্যরা হলেন রবার্ট বয়েল, বারজেলিয়াস এবং জন ডাল্টন।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কী?
রাসায়নিক বিক্রিয়া হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে এক বা একাধিক পদার্থ রুপান্তরিত হয়ে ভিন্ন এক বা একাধিক পদার্থ তৈরি করে। বিক্রিয়ায় শুরুর পদার্থের পরমাণুগুলি পুনরবিন্যাস্তহয়ে ভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন পদার্থ গঠন করে। তবে, বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার আগে এবং পরে পরমাণুর সংখ্যা এবং ভরের পরিমাণ একই থাকে। তাই তাদের ভরের কোন পরিবর্তন হয় না।

কোথায় ঘটে রাসায়নিক বিক্রিয়া?
মনে হতে পারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুধু ল্যাবরেটরিতে ঘটানো হয়। সেখানে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। প্রকৃতপক্ষে, বিক্রিয়া আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘটছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, এমনকি জীবনেরই একটি অংশ। জ্বালানী পোড়ানো, লোহা গলানো এবং পাউরুটি বেক করার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। আমাদের পরিপাকতন্ত্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় খাদ্য থেকে গ্লুকোজ এবং অন্যান্য উপাদানের অণু সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে কোষ দ্বারা শোষিত হয়। তারপরে গ্লুকোজটি দেহের কোষ পর্যায়ে আবারও ভেঙে গিয়ে রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন করে। এ শক্তি দেহে জ্বালানী হিসেবে কাজ লাগে। পুরো প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে।
তবে, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়া হলো সালোকসংশ্লেষণ, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জীবকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সালোকসংশ্লেষণে উদ্ভিদ, শৈবাল এবং নির্দিষ্ট কিছু অণুজীব সূর্য থেকে আলোক শক্তিকে খাদ্যের রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কিভাবে ঘটে, কেন ঘটে?
যখন দুই বা ততোধিক পদার্থ একসাথে মিশে একটি নতুন উপাদান তৈরি করে তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। মেশানো পদার্থগুলোর কিছু বিকারক এবং আর কিছু বিক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। বিক্রিয়ার ফলে এরা উভয়ে পরস্পর পরস্পরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে নতুন কিছু তৈরি করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে কত সময় লাগে?
যদিও কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটতে পারে (যেমন একটি বিস্ফোরণ) অন্যান্য রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে অনেক সময় লাগে, যেমন লোহায় জং ধরা।
যে হারে একটি বিক্রিয়া ঘটে তাকে বিক্রিয়ার হার বলে। তবে নানাভাবে বিক্রিয়ার হার পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিক্রিয়ায় তাপ, সূর্যালোক কিংবা বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে বিক্রিয়ার হার বাড়ানো যায়।
আবার এ শক্তিগুলোর অনুপস্থিতি বিক্রিয়ার হার কমিয়ে দিতে পারে।
তাছাড়া, বিকারকের পরিমাণ বিক্রিয়ার হারকে পরিবর্তন করে। বিকারকের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হলে দ্রুত বিক্রিয়া ঘটে।
এছাড়া, বিক্রিয়ায় তৃতীয় পদার্থ ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি পরিবর্তন করা যায়। যদি এই অতিরিক্ত পদার্থটি একটি বিক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, তবে এটিকে ইনহিবিটর বলা হয়। আর যদি এটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়, তবে এটিকে অনুঘটক বলা হয়।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কত ধরণের?
বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া রয়েছে। এগুলো প্রকৃতি পরিবেশে কিংবা কৃত্রিম ভাবে ল্যাবরেটরি- উভয় ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

সংশ্লেষণ বিক্রিয়া
যখন দুটি পদার্থ একসাথে মিশে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে তখন এই ধরনের বিক্রিয়া ঘটে।

বিয়োজন বিক্রিয়া
এটি সংশ্লেষণ বিক্রিয়ার বিপরীত। বিয়োজন বিক্রিয়ায় একটি জটিল পদার্থকে একাধিক ভিন্ন পদার্থে করে আলাদা করে দেয়।
দহন
একটি যৌগ অক্সিজেনের সাথে একত্রিত হয়ে যদি পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে তখন একটি দহন বিক্রিয়া ঘটে। দহন বিক্রিয়ার হার অনেক বেশি এবং এসময় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়।

অপসারণ বিক্রিয়া
অপসারণ বিক্রিয়ায় ঘটে যখন এক বা একাধিক যৌগ অন্য যৌগ থেকে একটি উপাদান কেড়ে নেয়। বিক্রিয়ায় এক বা একাধিক উপাদান অপসারিত হতে পারে।

ফটোকেমিক্যাল বিক্রিয়া
এই ধরনের বিক্রিয়া আলো এবং এর ফোটন জড়িত। সবচেয়ে পরিচিত আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া হল সালোকসংশ্লেষণ। সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ খাবার উৎপাদন করে।
গাছের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন সূর্যের আলো।

রাসায়নিক বন্ধন কিভাবে তৈরি হয়?
প্রতিটি উপাদান এবং বস্তু পরমাণু নামক ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। পদার্থের এই ছোট কণাগুলো আবার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন। প্রোটন ও নিউট্রন মিলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ঘটিত হয়। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরে।
প্রতিটি উপাদানের জন্য প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট, যা একটি উপাদানকে অন্য উপাদান থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
একটি পরমাণুর প্রোটন সংখ্যাই পরমাণুটির পারমাণবিক সংখ্যা। পর্যায় সারণীতে পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে পরমাণুগুলোকে সাজান হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা সর্বদা প্রোটনের সংখ্যার সমান।

পরমাণুগুলো আকারে অনেক ছোট এবং এক বা একাধিক ধরণের অনেকগুলো পরমাণু মিলে বড় একটি কাঠামো তৈরি করে। একে অণু বলা হয়।
পরমাণুগুলো রাসায়নিক বন্ধন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অণু তৈরি। রাসায়নিক বন্ধন পরমাণুগুলোকে একসাথে যুক্ত করে রাখে।
পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করে, ঠিক সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে যেমন প্রদক্ষিণ করে। পরমাণুগুলো বিভিন্ন স্তরে ঘুরে, স্তরগুলোকে বলা হয় শেল।
প্রতিটি শেল সর্বোচ্চ একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে। নিউক্লিয়াসের নিকটতম শেলে ইলেকট্রনের সংখ্যা পরিমাণ সবচেয়ে কম এবং দূরবর্তী শেলে ইলেকট্রনের পরিমাণ বেশি থাকে।
পরমাণুগুলো বাইরের শেলটি ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকতে পছন্দ করে, যদিও এটি পরমাণুগুলোতে খুব বেশি ঘটে না। শুধু নোবেল গ্যাসসমূহের বাইরের ইলেকট্রন শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে ।
পরমাণুগুলোর বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকার প্রবণতা রাসায়নিক বন্ধন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ রাখার জন্য পরমাণুগুলো ইলেকট্রন বিনিময় করে।

যে ইলেকট্রনগুলি একটি পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেলে অবস্থান করে এবং রাসায়নিক বন্ধনে অংশ নিতে পারে তারা ভ্যালেন্স ইলেকট্রন বা বন্ধন ইলেকট্রন নামে পরিচিত। যদি একটি পরমাণুর বাইরের শেল তুলনামূলকভাবে খালি থাকে, তবে পরমাণুটি সেই ইলেকট্রনগুলিকে অন্য পরমাণুকে দিয়ে দিতে চায়।
অন্যদিকে, যদি একটি পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে প্রায়-পূর্ণ হয়, তবে এটি কিছু ইলেকট্রন অর্জনের দিকে নজর দেবে। এর মাধ্যমে পরমাণুটির সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে। এভাবে রাসায়নিক বন্ধনের অংশগ্রহণকারী উভয় পরমাণু বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হয়।
লাল রঙের পরমাণুগুলোর দু’টি হাত দিয়ে দু’টি কালো রঙের পরমাণু হাত ধরে রেখেছে। এটাই রাসায়নিক বন্ধন (সমযোজী)।

রাসায়নিক বন্ধন কত প্রকার?
সাধারণত দুই ধরণের রাসায়নিক বন্ধন দেখা যায়- সমযোজী বন্ধন ও আয়নিক বন্ধন।

সমযোজী বন্ধন
এই ধরনের বন্ধন প্রক্রিয়ায় দুইটি পরমাণুর কোনোটিই ইলেকট্রন হারাবে না বা লাভ করবে না। বরং তারা তাদের ইলেকট্রন ভাগ করে নিশ্চিত করে যে উভয় পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। সমযোজী বন্ধনে ইলেকট্রন সবসময় জোড়ায় শেয়ার করা হয়।

আয়নিক বন্ধন
একটি আয়নিক বন্ধন গঠিত হয় যখন একটি পরমাণু তার সবচেয়ে বাহিরের অপূর্ণ ইলেকট্রন শেলে থাকা ইলেকট্রন (এক বা একাধিক হতে পারে) অন্য পরমাণুকে দান করে যাতে উভয় পরমাণু বাইরের শেল ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ অবস্থায় থাকতে পারে।

রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কে ৪টি দারুণ তথ্য
১। নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং শেলের মধ্যে ইলেকট্রনগুলোর মধ্যে আকর্ষণের কারণে অণুর মধ্যে পরমাণুগুলো একসাথে থাকে।
২। নোবেল গ্যাসগুলো (হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন ও রেডন) সাধারণত অন্যান্য পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া দেখায় না কারণ তাদের স্বাভাবিকভাবে বাইরের শেল ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে।
৩। রাসায়নিক বিক্রিয়া কেন হয়?
যখন দুই বা ততোধিক অণু পরস্পরের কাছাকাছি আসার ফলে অণুগুলি পরিবর্তিত হলে বিক্রিয়া ঘটে। এসময় অণুতে থাকা পরমাণুগুলোর মধ্যকার বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন তৈরি হয়। এতে নতুন অণু গঠিত হয়।
৪। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন হয় কেন?

যখন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তখন বিক্রিয়াস্থলে পরিবেশে হতে শক্তি আসে অথবা বিক্রিয়াস্থল থেকে এর পরিবেশে শক্তি চলে যায়।
যদি দুটি পদার্থ বিক্রিয়া করে এবং মিশ্রণের তাপমাত্রা হ্রাস পায় তবে বিক্রিয়াটি একটি তাপহারী (এন্ডোথার্মিক) বিক্রিয়া।
আবার, যদি দুটি পদার্থ বিক্রিয়া করে এবং মিশ্রণের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে বিক্রিয়াটি একটি তাপোৎপাদী (এক্সোথার্মিক) বিক্রিয়া।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার সময় অণুগুলোর মধ্যে বন্ধন ভাঙা এবং উৎপাদগুলোর বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধন ভাঙতে শক্তি লাগে এবং বন্ধন তৈরি হলে শক্তি মুক্তি পায়।

যদি কোনো বিক্রিয়া তাপহারী বা এন্ডোথার্মিক হয়, তাহলে বিক্রিয়কগুলোর বন্ধন ভাঙতে উৎপাদগুলোর বন্ধন তৈরি হওয়ার চেয়ে বেশি শক্তি লাগে। আবার, বিক্রিয়া তাপোৎপাদী বা এক্সোথার্মিক হলে বিক্রিয়াকদের বন্ধন ভাঙতে যতটা লাগে তার থেকে বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় যখন উৎপাদের বন্ধন তৈরি হয়।