নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়কে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ। মানুষের তুলনায় নগরীতে নেই কোন বাস স্টপেজ, পার্কিং জোন, পার্কিং স্পট, লেনের চিহ্ন, নেই পথচারী পারাপারের জেব্রাক্রসিং। ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘মাসগ্রুপ’ পাইলট প্রকল্প হিসাবে কাজটি শুরু করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরবর্তীতে নগরীর ৫৩ মোড়ে একই ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে এমনটি জানিয়েছেন প্রকল্পের সমন্বয়ক। ডিজিটাল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (ডিটিএম) এর আওতায় বেসরকারি অর্থায়নে কাজটি শুরু করা হয়েছে। নগর পুলিশ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মাসগ্রুপকে পাইলট প্রকল্পটি করার অনুমতিও দিয়েছে। চারজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষা করার পর প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে এমনটি জানালেন ‘মাসগ্রুপে’র সমন্বয়ক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম।
গবেষণা দলের চার প্রকৌশলী হলেন, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী শামীমুজ্জামান বসনিয়া, চুয়েটের অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী স্বপন কুমার পালিত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী শাহীনুল ইসলাম খান, চুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক প্রকৌশলী মুহাম্মদ তারেকুল আলম। গবেষণা দলটির সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম।
তিনি জানান, আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সড়কের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা জরুরি। নগরীতে এ ধরনের জায়গার সংকট রয়েছে। তারপরও আমাদের যা আছে তা নিয়েই কাজ শুরু করতে হচ্ছে। তিন ধাপে কাজীর দেউড়ি মোড়ে ডিটিএম’র কাজ করা হবে।
১ম ধাপ : কাজীর দেউড়ি মোড় জংশনের কেন্দ্র হতে ৩০০ ফুট ব্যাসের এলাকার মধ্যে ‘নো স্টপেজ জোন’ তৈরি করা। লেন মার্কিং করা, প্রয়োজনে লেফ্ট লেইন ফেন্সিং করা। রিকশার জন্য আলাদা লেইন চিহিত করা। জংশনে আসার পূর্বেই লেইন আলাদাকরণ পয়েন্ট চিহিত করা, যেন যানবাহন সমূহ পূর্বে থেকেই এর নিদিষ্ট লেইনে প্রবেশ করতে পারে। পথচারী পারাপারদের জন্য জেব্রাক্রসিং দেয়া।
২য় পর্যায় : বর্তমানে যে সিগন্যাল বাতিগুলো রয়েছে তা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে চালানো হয়। এসব বাতি বাদ দেয়া হবে। অটো ও ম্যানুয়েল নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হবে। যা অ্যাপস ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সহজেই। ইতিমধ্যে অ্যাপস তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পথচারী পারাপারের জন্য আলাদা সিগন্যাল বাতি লাগানো হবে।
৩য় পর্যায় : প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন হবার পর উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা স্থাপনার মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কাজে হাত দেয়া হবে। এই ক্যামেরার মাধ্যমে একই সাথে প্রায় তের ধরনের ট্রাফিক আইন অমান্যকরণ ধরা যায় যেমন, লাল-সবুজ বাতি না মেনে চলা, নো পার্কিং জোনে থামা, ওভার টেকিং, ওভার লোড, স্পিড লিমিট অমান্য ইত্যাদি তদারকি করা। শুধু ট্রাফিক আইন অমান্যকরণ ধরা নয়, সাথে সাথে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং গাড়ির মালিককে এস.এম.এস এর মাধ্যমে নোটিশ দিবে। পরবর্তীতে যদি গাড়ির মালিক যথাসময়ে জরিমানা প্রদান না করেন সেই ক্ষেত্রে, জরিমানা না আদায় পর্যন্ত গাড়ির বাৎসরিক রেজিস্ট্রেশন সয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক হয়ে যাবে।
প্রকৌশলী শামীম বলেন, শুধুমাত্র সড়কে সাংকেতিক চিহ্ন দিলে যানজট এড়ানো আমাদের দেশে সম্ভব নয়। কারণ সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার লাফ দিয়ে অনেক লোককে রাস্তা পার হতে দেখা যায় নগরীতে। পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কেউ চাইলেই ফুটপাত থেকে সড়কে নামতে পারবে না কিংবা ইচ্ছেমতো রাস্তা পারাপার হতে পারবে না। নগরীতে একই সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। রিকশার কারণে অন্যান্য যানবাহনকে ধীরগতিতে চলতে হয়। বিশ্বের কোথাও একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে না। চাইলেই একদিনে রিকশা বন্ধ করাও সম্ভব নয়। এ প্রকল্পে ডিজাইনটি এমনভাবে করা হয়েছে রিকশা থেকে যাত্রীদের নির্দিষ্টস্থানে নেমে যেতে হবে। চাইলের জংশনে রিকশা প্রবেশ করতে পারবে না।