ক্রাইম প্রতিবেদক: রক্তের সম্পর্কে কোনো অভিভাবকের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিখোঁজের সন্ধান বের করা দূরে থাক, থানায় আইনগত ডায়েরি নিতেও নারাজ পুলিশ।
অভিযোগ উঠেছে, থানা পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে দফায় দফায় বৈঠক করেও বাবার দ্বিতীয় বিয়ে বন্ধ এবং সম্পত্তি কব্জায় নিতে পারছিলেন না সন্তানরা। তাই পরিকল্পিতভাবে মামার সহযোগিতায় বাবাকে তুলে নিয়ে পাগল সাজিয়ে কোনো এক পাগলা গারদে (রিহ্যাব সেন্টারে) বন্দি করা হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে নিখোঁজের শ্যালক ও সন্তানরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি থানায় গিয়ে এই বিষয়ে জানানোর পরও পুলিশ নিখোঁজ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ চট্টগ্রাম ষ্টেশন রোডের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফজল করিমের।
নিখোঁজ আবুল কালাম (৫৫) চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানাধীন সৈয়দ শাহ সড়কের বাসিন্দা। তাঁর গ্রামের বাড়ি রাউজানের বিনাজুড়ি কাগতিয়ার মজিদা পাড়ায়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গত দুই বছর ধরে নগরের অক্সিজেন কয়লার ডিপোর শীতল ঝরণা এলাকায় এক ব্যাচলর ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
ব্যবসায়ি ফজল করিম জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে আবুল কালামের কোনো খোঁজ নেই। তার ব্যাপারে সাম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান মিলেনি। মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিয়েও কোনো সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত দুইদিন আগে স্বপন নামক তার এক চাচাত ভাই জানিয়েছেন, স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে আবুল কালাম ওইদিন দুপুরের দিকে নগরের সৈয়দ শাহ রোডে অবস্থিত নিজের জায়গায় থাকা পরিত্যক্ত কিছু সেমিপাকা ঘর ভাংতে গিয়েছিলেন। তবে সেদিন তার বড় মেয়ে ও শ্যালক জাহাঙ্গিরের বাধার মুখে সেসব আর ভাংতে পারেননি। পরে সেখান থেকে ফেরার পথে নগরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দার পুকুর পাড় এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশায় কয়েক লোক আবুল কালামকে মারধর করে জোরপূর্বক তুলে নেয়। ওই সময় অপহরণকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তার গায়ের জামাকাপড় সব ছিঁড়ে গেছে।
স্বপন জানায়, এই ঘটনার পর পরই স্বপন নিজে প্রথমে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। সেখান থেকে র্যাব তাকে সিএমপির চান্দগাঁও থানায় পাঠায়। কিন্তু পুলিশ তার কোনো অভিযোগ না নিয়েই তাকে ফিরিয়ে দেয়। সেই থেকে আবুল কালামের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
ফজল করিম বলেন, এই বিষয়টি জানার পর গত ২২ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যার পর বাকলিয়া থানায় গিয়ে জানিয়েছি। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজনসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ নভেম্বর আবুল কালাম ও তার ছেলে-মেয়েদের মধ্যকার জায়গা এবং পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত থানায় একটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এই নিখোঁজের বিষয়ে থানা কিছুই জানে না। আর এখন রক্ত সম্পর্কের কেউ লিখিতভাবে না জানালে কোনো ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব না। পরে রাত সাড়ে দশটার দিকে সিএমপির চান্দগাঁও থানায় গিয়ে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়। এবার এই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মঈনুর রহমানও জবাব দিলেন, ভিকটিমের পরিবারের সদস্য বা রক্তের সম্পর্কের কেউ লিখিতভাবে জানালে পুলিশ কেবল নিখোঁজ ডায়েরি নিতে পারে।
এই ব্যাপারে আলাপকালে সিএমপির বাকলিয়া থানার নাম প্রকাশ না করা শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, থানায় বৈঠকের মধ্যেই আবুল কালামের বড় মেয়ে বলেছিল যদি কথা না মানে প্রয়োজনে তার বাবাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে রিহ্যাব সেন্টারে (পাগলা গারদে) আটকিয়ে রাখা হবে। ওই সময় পুলিশ তার এই কথায় কড়া প্রতিবাদ করে এবং তাকে সতর্ক করে দেয়। তাকে বলা হয়েছিল, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া কাউকে চাইলেই রিহ্যাব সেন্টারে নেওয়া যাবে না। আগে আদালতের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। হয়তো পাগল সাজিয়ে তাকে কোনো পাগলা গারদে নিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপি চান্দগাঁও থানার অফিসারস্ ইনচার্জ (ওসি) মো. মঈনুর রহমান বলেন, যেহেতু নিখোঁজের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি, তাই এব্যাপারে নিখোঁজ ডায়েরি বা অভিযোগ কোনটাই নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।