যশোর জেলা প্রতিনিধি: বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে ‘দ্রোহের আগুনে ফোটাবো সূর্যমুখী’ শ্লোগানে যশোর দুইদিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঐতিহাসিক টাউনহল ময়দানের শতাব্দী বটমূলে রওশন আলী মঞ্চে এ নাট্যোৎসব শুরু হয়। একইসাথে ছয় নারী বীরমুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোর অঞ্চলের ৬ নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা- রওশন জাহান সাথী, কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা, ফাতেমা খাতুন, রোকেয়া বেগম, আরতী রাণী সাহা ও অর্পনা বিশ্বাস।
নাট্যোৎসবে যশোর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ও ঢাকার ৫টি নাট্যদলের ৭টি নাটক পরিবেশিত হচ্ছে। নাট্য মঞ্চায়নের পাশাপাশি যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় পরিবেশিত হচ্ছে নাচ-গান ও কবিতায় সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

উদ্বোধনী পর্বে আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন বির্বতন যশোরের সভাপতি ও নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক নওরোজ আলম খান চপল।
স্বাগত বক্তব্য দেন বির্বতন যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর বিশ্বাস।
আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রওশন জাহান সাথী, বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুকুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু।
বক্তরা বলেন, বিজয়ের মাস এলে আমাদের মনে এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি হয়। সেই উদ্দীপনা আমাদের মাঝে প্রচ- আনন্দে রূপ নেয়। সেখানে আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকে না। সকল ধর্ম, সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা মিলে এই বিজয় উদযাপন করে থাকি। অগণিত মানুষের আন্দোলনে লড়াইয়ে ক্রন্দনে আজকের এই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্যের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিকশিত মাধ্যম নাটক। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের অনেক কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। বাঙালি সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে নাটক সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সেই ভূমিকা পালন করে আসছে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন বির্বতন যশোর। দেশ শোষণমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই সংগঠন তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

আলোচনাসভা শেষে নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা রওশন জাহান সাথী, কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা, ফাতেমা খাতুন, রোকেয়া বেগম, আরতী রাণী সাহা ও অর্পনা বিশ্বাসকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে সুরধনী সংগীত নিকেতন যশোরের শিল্পীরা গণসংগীত, নৃত্যবিতান যশোরের শিল্পীরা নৃত্য, বির্বতন যশোরের আবৃত্তি-আর্ট স্কুলের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনার মাধ্যমে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব আঙিনা। রাতে একে একে মঞ্চস্থ হয় তিনটি নাট্যদলের তিনটি নাটক। চুয়াডাঙ্গার দর্শনার সাংস্কৃতিক সংগঠন অনির্বানের মুমি প্রেমচাদের গল্প অবলম্বনে নাটক ‘মানব’, চুয়াডাঙ্গার অরিন্দম সংগঠনের পরিবেশনায় ‘পূর্ব কথন’ এবং বির্বতন যশোরের পরিবেশনায় ‘শেকড়ের সন্ধানে’ নাটক মঞ্চায়ন হয়।
আজ শনিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ উৎসবের সমাপনী দিন বিকেল ৪টায় একই মঞ্চে রোকেয়া পদক প্রাপ্ত অর্চনা বিশ্বাসকে গুণী ব্যক্তি সম্মাননা প্রদান করা হবে। এরপর উদীচী ও সুরবিতান সংগীত একাডেমি যশোরের পরিবেশনায় গণসংগীত হবে। সন্ধ্যায় বির্বতন যশোর আবৃত্তি আর্ট স্কুলের কবিতা আবৃত্তি হবে। রাতে নড়াইলের চিত্রা থিয়েটার, যুগান্তর এবং বির্বতন যশোরের পরিবেশনায় নাটক মঞ্চায়ন হবে।
Post Views: 328