মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার একটি প্রবাহমান গুরুত্বপূর্ণ নদী ‘ভোলা খাল’ এর বুকে জেগে উঠা চর দখল করে স্ক্রেভেটার দিয়ে বাঁধ তৈরী করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী যুবদল নেতা! গত কয়েক দিন ধরে প্রকাশ্যে নদীর চর দখল করে বাঁধ তৈরীর কাজ চালিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নদীর চর দখলের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি! এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন ও পরিবেশবাদী মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নদীর চর দখলে অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম মো: সাজ্জাদ নুর (৩৮)। তিনি বারাবকিয়া ইউনিয়নের বোধা মাঝির ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা ছৈয়দ নুর মাষ্টারের পুত্র। তবে যুবদল নেতা সাজ্জাদ দাবি করেছেন, তিনি ভোলা খালের চরের জায়গাটি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। তিনি প্রতি বছর সেখানে লবণের চাষাবাদ করে আসছেন। কখন, কোন দফতর থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও মগনামা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ভোলা খালটি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ভোলা খাল বঙ্গোপসাগরের শাখা নদী হিসেবেও পরিচিতি। বারবাকিয়া ইউনিয়নের বোধা মাঝির ঘোনা গ্রামের পশ্চিমাংশে ভোলা খাল ভরাট হয়ে প্রায় দশ একরের চেয়েও বেশি জায়গা ভরাট হয়ে চরে রূপান্তরিত হয়েছে। আর নদীর চর ভরাট হলে বিগত ৮/১০ বছর পূর্বে সেখানে উপকূলীয় বন বিভাগ বনায়নও সৃজন করেছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বন বিভাগের অবেহলায় বনায়নটি বর্তমানে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এরপর থেকে চরে দখলবাজদের থাবা শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলা খালের বোধা মাঝির ঘোনা অংশে জেগে উঠা নদীর চরের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের। বোধা মাঝির ঘোনা গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারের বিভিন্ন দফতরের থেকে ভোলা খালের চরের ১ নং খতিয়ানভুক্ত সরকারী খাস জায়গা ইজারা নিয়েছেন মর্মে দাবি করে লবণ ও চিংড়ি তৈরী করে। দীর্ঘদিন ধরে বোধা মাঝির ঘোনা গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী জেগে উঠা চর দখল করে লবণ ও চিংড়ি চাষ করে আসলেও পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে চর উদ্ধারে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে দিন দিন সরকারী জায়গা জবর দখলবাজরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বারবাকিয়া ইউনিয়নের বোধা মাঝির ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা ছৈয়দ নুর মাষ্টারের ছেলে, পেকুয়া উপজেলা যুবদলের প্রভাবশালী নেতা সাজ্জাদ নুর গত কয়েক দিন ধরে একটি স্ক্রেভেটার মেশিন দিয়ে ভোলা খালের চরে বাঁধ তৈরীর কাজ অব্যাহত রেখেছে। নদীর চরে যুবদল নেতা সাজ্জাদের বাঁধ তৈরীর কাজ শেষ হলে নদীর জোয়ার-ভাটার সময় জোয়ারের পানির প্রবাহ মারাত্মক বাধার সৃষ্টি হবে এবং পশ্চিমাংশে মগনামার বাইন্যা ঘোনা অংশে নির্মিতব্য বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি মহাসড়ক নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকাও করেছেন মগনামার বাসিন্দারা।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানান, নদীর পাশে বা বুকে জেগে উঠা চর ইজারা দেওয়ার কোন বৈধতা নাই। ভোলা খাল বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ন নদী। এ নদী বর্ষাকালে পেকুয়ার কয়েকটি ইউনিয়নকে বন্যামুক্ত করে। নদীতে বিভিন্ন রকমের জীববৈচিত্রের বিচরণও রয়েছে। ভোলা খালের বারবাকিয়া ইউনিনের বোধা মাঝির ঘোনার পশ্চিমাংশে নদীর চরে বাঁধ দেওয়া হলে বর্ষাকালে নদীর পানি চলাচলের গতিপ্রবাহের মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করবে। তাই অনতিবিলম্বে নদীর চরের জায়গা যদি কোন ব্যক্তি বিশেষকে ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে তা বাতিলসহ নদীর চরে বাঁধ নির্মাণে জড়িত যুবদল নেতা সাজ্জাদসহ অন্যান্য জবর দখল বাজদের বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যতায় নদীর চর দখলদারদের পেঠে চলে যাবে।
নদীর চর দখলের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা মুঠোফোনে জানতে বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো: হেলাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, বোধা মাঝির ঘোনার পশ্চিমাংশে ভোলা খালের চর কেউ ইজারা নিয়েছে কিনা তার জানা নাই। খালের চরে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণে কেউ জড়িত থাকলে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নদী, খাল, নদীর চর দখলের সাথে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবেনা বলে ভূমি অফিসের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।