পেকুয়া প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় একটি ধুসর প্রজাতির বিরল বক পাখি শিকারের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবকের নাম আমজাদ হোসেন। তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পশ্চিম বাইম্যাখালী গ্রামের আবুল হাশেমের পুত্র ও পেকুয়া বাজার দোকান মালিক সমিতির ম্যানেজার পদে কর্মরত রয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ ডিসেম্বর (শনিবার) ভোরে ওই যুবক তার বাড়ির পাশ থেকে একটি ধূসর প্রজাতির বিরল বক পাখি শিকার করেন। পরে অথিতির পাখির ছবি নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেন। এদিন দুপুরে ওই যুবক অথিতি পাখিটি ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভুরিভোজও করেন! এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয়রা বন বিভাগকে অবহিত করার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় বন বিভাগ!
অভিযুক্ত ব্যক্তি পাখি শিকার করার পর নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে “আল্লাহর সৃষ্টি কতই না সুন্দর” লিখে স্ট্যাটাসও দিয়েছিল! তবে কিছুক্ষণ পর তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি নিজের আইডি থেকে ডিলিট করে দেন। স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর অনেকেই তা স্ক্রীণ শর্ট করে রাখেন এবং ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেন।
স্থানীয়দের সুত্রে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর ভোরে আমজাদ হোসেন তার বাড়ির পাশ থেকে একটি ধূসর প্রজাতির বিরল বক পাখি শিকার করেন। পাখিটি শিকার করে আমজাদ তার বাসায় নিয়ে যান। এসময় ধূসর প্রজাতির বক পাখির দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে অন্য কাউকে দিয়ে নিজের এনড্রয়েট মোবাইল ফোনে ছবিও তুলেন। তারপর নিজের ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাস লিখে ছবি শেয়ার করে দেয়। অবশ্য সেই ছবিসহ স্ট্যাটাস ডিলেট করে দেয়।
পাখি শিকার করে হত্যার কারণ জানতে ওই যুবক আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর শীতের মৌসুমে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখপখিম সারস, কাইমা, শ্রাইক, গাঙ কবুতর, বনহুর, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড়া অন্যতম। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির হাঁস ছাড়াও গাগিনি, গাও, ওয়েল, পিগটেইল, থাম, আরাথিল, পেলিক্যান, পাইজ, শ্রেভির ও বাটান এসব পাখি এসে থাকে।
প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের পাখি দুই শ্রেণির। আবাসিক আর অনাবাসিক। অতিথি পাখি অনাবাসিক শ্রেণির আওতায় পড়ে। আবাসিক ও অনাবাসিক মিলে দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি অনাবাসিক। সব অনাবাসিক পাখি শীতের সময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়। আর এই থেকে যাওয়া ১০ টি পাখির মধ্যে একটি হচ্ছেন ধুসর শ্রেণীর সাদা বক।
জানা যায়,১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে।
এদিকে উক্ত ঘটনার স্থানীয়রা পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া বন রেঞ্জ অফিসে অবহিত করলেও বন বিভাগ এখনো পর্যন্ত পাখি শিকারে অভিযুক্ত আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
Post Views: 532