ঢাকা : র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য তবে এই ঘটনা দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেছেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আজ রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে অধিদফতর প্রকাশিত ‘মা ও শিশু’ বিশেষ সাময়িকীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা শাহেনুর মিয়ার সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনে দু’দেশের টেকনিক্যাল সহযোগিতায় আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপকৃত হয়েছে। কারণ সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক দমন করতে বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। কিন্তু মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট যেভাবে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা অনভিপ্রেত, দু:খজনক, অগ্রহণযোগ্য, অকার্যকর।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করার ঘটনা বাংলাদেশে আগে ঘটেছে কি না বা বহু পূর্বে ঘটেছে কি না সেটি আমার জানা নেই। কোন পূর্ব যোগাযোগ ছাড়া হঠাৎ করে এভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী হয়েছে কিনা সেটিও একটি বিষয়। আমরা আশা করবো আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে আমাদের দেশের ‘সেন্টিমেন্ট’ অনুধাবন করতে সমর্থ হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। কিন্তু মানবাধিকারের চরম লংঘনকারী ইসরাইলের কোনো কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায়নি। অনেক উন্নত দেশে এ ধরণের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটলেও যাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সম্পর্ক যুক্ত সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আমরা দেখি নাই।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন হয়। জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে গলার ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনা বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি। মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রচন্ডভাবে, ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর মানবাধিকার লংঘন করে এবং তাদের পুলিশি হেফাজতে যে মৃত্যু হয় সেগুলো নিয়ে, গুয়ান্তানামো বে’তে বন্দিদের ওপর নির্যাতন নিয়ে, বিশ্বব্যাপী সমালোচনা রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবাদ হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসীরা যখন বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করেছে, তখন তাদের ছেলেমেয়েদেরকে যেভাবে বছরের পর বছর মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, সেটি অন্য কোনো দেশে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এ নিয়েও বিশ্বব্যাপী এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবাদ হয়েছে, এখনও হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেটি ভবিষ্যতের বিষয়, এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে, আমরা মনে করি, এই ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর প্রেক্ষিতে আমাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা মনে করি, কিছু এনজিও ও ব্যক্তিবিশেষ ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং তারা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয় অন্যান্য দেশেও ক্রমাগতভাবে অসত্য তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে, সেগুলোর প্রেক্ষিতেই এ ঘটনা ঘটেছে।’
মন্ত্রী এসময় ‘মা ও শিশু’ সাময়িকী প্রকাশের জন্য তথ্য অধিদফতরকে ধন্যবাদ জানান এবং এই সাময়িকী প্রকাশের পাশাপাশি অনলাইনেও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, বলেন মন্ত্রী।
Post Views: 207