লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাগরে জোয়ার স্বাভাবিকের ছেয়ে ৫/৬ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুতুবদিয়া উপকূলের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১২শ একর উৎপাদিত লবণ মাঠ জোয়ারে ডুবে যায় এবং ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিগত দুইদিন ধরে রবিবার ও আজ সোমবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে সারাদেশ ব্যাপী। এতে লবণ চাষীরা মারাত্নক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জোয়ার আর বৃষ্টিতে লবণচাষীদের শতভাগ উৎপাদিত লবণ মাঠ তলিয়ে গেছে। লবণচাষীরা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে গত অক্টোবর মাসে মাঠে নামে। এক মাসের মাথায় লবণ উৎপাদন অবস্হায় হোঁচট খেলো চাষীরা। বিগত তিনদিন ধরে সূর্য্যগ্রহণ, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আর বৃষ্টির প্রভাবের ফলে লবণ উৎপাদনে চাষীরা মাঠে মরা।
কুতুবদিয়া উপকূলের বিশিষ্ট লবণ ব্যবসায়ী কৈয়ারবিল ইউপির চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর জানান, চলতি বছর শুস্ক মৌসুমে কুতুবদিয়া উপকূলের প্রায় ছয় হাজার একর জমিতে লবণচাষ হচ্ছে। প্রান্তিক চাষীরা জমি বর্গা ও আগাম নিয়ে লবণচাষ শুরু করে। এ প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জোয়ারে চাষীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কেটে উঠতে চাষীদের আরো একমাস সময় লাগবে।
লবণচাষী আবদুল গফুর বলেন, পূর্ণিমায় ভরাকাটালের জোয়ার ও সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় “জাওয়াদ” এর প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই প্লাবণ হয়। বায়ুবিদ্যুৎ বিগত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অরক্ষিত হয়ে পড়ে, দ্রুত সময়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের অর্থ বরাদ্ধ থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই এখনো বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।
লবণ ব্যবসায়ী মোঃ আবু মুছা বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিসিক শিল্পের বাইরে,উত্তর ধুরুং, লেমশীখালী,বড়ঘোপ এলাকার হাজার হাজার হেক্টর লবণ উৎপাদনে বিঘ্নিত হয়েছে। চাষীরা মাঠে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লবণ ব্যবসায়ীরাও ক্ষিতর সম্মুখীনের মুখে পড়েছে।
লেমশীখালী এলাকার লবণচাষী সালামত উল্লাহ জানান, গত তিন ও চার নভেম্বর জোয়ারের পানি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক ও বায়ুবিদ্যুৎ এলাকার প্রায় ১২শ একর লবণের মাঠ জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এতে শতশত ক্ষুদ্র লবণ চাষী ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে৷ বায়ুবিদ্যুৎ এলাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ডুকে প্রায় ৫শ হেক্টর লবণের মাঠ প্লাবিত হয়৷
আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম সিকদার জানান, আলী আকবর ডেইল বায়ুবিদ্যুৎ,তাবলরচর,খুদিয়ারটেক এলাকায় শত শত হেক্টর লবণ মাঠ জোয়ারে তলিয়ে গেছে। বায়ুবিদ্যুৎ এলাকায় বেডিবাঁধ ভাঙা থাকায় ভাঙন বাঁধ দিয়ে জোয়ার ডুকে এ ক্ষতির হয়েছে
উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুল খালেক নামে এক লবণচাষী জানান, ঋণ নিয়ে পাঁচ বিঘা মাঠে লবণ উৎপাদনে নেমেছি, আমার প্রথম চালানের সব লবণ চলে গেছে, আরো ২০দিন সময় লাগবে ফের উৎপাদনে মুখ দেখতে। শংকায় আছি মৌসুম শেষে লাভের কথা দুরে থাক দেনা শোধ করতে পারব কি না জানে না।
আলী আকবর ডেইল ইউপির ৮নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য শামশুল আলম বলেন, আমার নিজেরসহ শত চাষীর এক হাজার হেক্টর লবণ মাঠের ক্ষতি হয়েছে। লবণের দাম কম থাকায় এমনিতেই লবণ চাষের প্রতি চাষীদের আগ্রহ হারাচ্ছে, অন্য দিকে চাষীরা উৎপাদনের শুরুতেই এতবড় ধাক্কায় চরম হতাশায় ভোগছেন।