বনানী (ঢাকা) প্রতিনিধি: রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানীর পাশেই অপরাধীদের সবচেয়ে নিরাপদ আস্তানা কড়াইল বস্তি অস্ত্র-মাদক কেনাবেচা, নারী-শিশু পাচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণহীন সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছে। অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত কড়াইল মাদকেরও খোলামেলা হাট-বাজার। অবৈধভাবে বসতি, অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব কিছুই এখানে ব্যবহার হচ্ছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। বস্তির ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ থাকলেও মিটার নেই। একই অবস্থা গ্যাস ও পানির ক্ষেত্রেও। আর এসব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের কাছ থেকে অবৈধ ঘর ভাড়াসহ নানা সেবা দেওয়ার নামে মাসে অন্তত ১০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কড়াইল বস্তি থেকেই মাদকের পাইকারি চালান যাচ্ছে রাজধানীর সর্বত্র। এ বস্তিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বাহিনী, ভাড়াটে খুনি চক্র। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধে জড়িত এ বস্তির কয়েকটি চক্র। বছরের পর বছর ধরেই কড়াইল বস্তি সন্ত্রাসীদের অঘোষিত অভয়ারণ্যে পরিণত থাকলেও তাতে বাধ সাধতে পারেনি কেউ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশির দশক থেকেই সন্ত্রাসীদের আস্তানা এবং রাজধানীর অন্যতম মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত কড়াইল বস্তি উচ্ছেদে সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শত চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত বস্তিটি বহাল তবিয়তে আছে। এর দখল নিয়েও বহুবার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।এভাবেই টিকে আছে কড়াইল বস্তি। অভিযোগ রয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ২০টি গ্রুপের সদস্যরা কড়াইল বস্তি এবং পার্শ্ববর্তী লেক এলাকায় অবস্থান করে। বিভিন্ন স্থানে বসে বৈঠক। এসব বৈঠকেই ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরি এবং বাসাবাড়িতে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। বেশিরভাগই কড়াইল বস্তিতে আস্তানা গেড়েছে। বস্তিতে কিশোর সন্ত্রাসী বা বস্তির খুদে রাজা হিসেবে পরিচিত। অনেকের নামে হত্যা থেকে শুরু করে মাদক-ছিনতাই, চুরি, গাড়ি ভাঙচুর ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত কড়াইল বস্তি অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দিনের বেলায় কড়াইল বস্তির অবস্থা স্বাভাবিকই থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় এই চিত্র বদলে যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই বস্তিতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ে। বাড্ডা, কচুক্ষেত, খিলক্ষেত, ভাটারা, বেরাইদ, মহাখালী এবং তেজগাঁও এলাকার সন্ত্রাসীরা এই বস্তিতে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ে। এসব সন্ত্রাসী পুলিশ ও র‌্যাবের তালিকাভুক্ত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কড়াইল বস্তিতে পাইকারি মাদক সরবরাহের মহারাজ হয়ে উঠেছে বনানী থানা পুলিশের ড্রাইভার ও কথিত সোর্স শহীদ। ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানীর হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে গ্রেফতার হওয়া শহীদ পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন। এর আগে শহীদ ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা গুলশান থানায় থাকাকালে তার সোর্স ও ড্রাইভার ছিল, তখন থেকেই কড়াইল বস্তির একাংশ নিজের দখলে নেন। সেখানেই এখন গড়ে উঠেছে তার অপ্রতিরোধ্য মাদক সাম্রাজ্য। ঢাকা উওর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মাদক স্পট এবং মাদক ব্যবসায়ী থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে শহীদ। যারা চাঁদা দেয় না তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

এদিকে নূরুল ইসলাম বস্তির ঝিলপাড়ে বসিয়েছে রমরমা জুয়ার আসর। রাত-দিন সেখানে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা চলে। এ ছাড়াও বিচার শালিসের নামে অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করতে আওয়ামী লীগের অফিস বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে টর্চার সেল।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে, বস্তির বেলতলা, বৌবাজার, জামাইবাজার, এরশাদনগর, টিএনটি বস্তি ও ঝিলপাড়ে ৩০ হাজার ঘর ও কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। প্রতি ঘরে একটি করে বাতি ধরলে তা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর বাইরে রয়েছে ফ্যান, এসি, ফ্রিজ ও টেলিভিশন। প্রতি বাতি, টিভি ও ফ্যানের জন্য এক পয়েন্ট ধরে ২০০ টাকা দিতে হয়। আর ফ্রিজ ও এসি চালালে ৫০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকাও নেওয়া হয়। সঙ্গে রয়েছে গ্যাস, পানি ও বাসা ভাড়া।

বস্তিবাসীর ভাষ্যমতে, তারা প্রতি ঘর আড়াই থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। বিভিন্ন ভাসমান ও স্থায়ী দোকান থেকে প্রতি মাসে ৮০ লাখ টাকা, তালতলা, বৌবাজার, জামাইবাজার ও এরশাদনগর মার্কেট থেকে তোলা হয় ১ কোটি টাকা, প্রতিটি ঘর থেকে ভাড়া বাবদ ৬ কোটি টাকা, গ্যাসের সংযোগ থেকে ৫০ লাখ, বিদ্যুৎ থেকে ৪০ লাখ এবং শুধু পানির সংযোগ থেকেই তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা। এতে টাকার অঙ্কে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বস্তি জুড়ে রয়েছে বিশাল চাঁদাবাজ চক্র। বস্তিতে দুটি চক্র সক্রিয়। এর মধ্যে ‘নান্দাইল গ্রুপ’ সবচেয়ে শক্তিশালী। এসব টাকা বিভিন্ন দফতরে দেওয়ার পর বাকি টাকা পকেটে ঢুকিয়ে অল্প দিনেই কোটিপতি বনে গেছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে বনানী থানা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ফরিদ খান, ইয়াকুব, ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী জোনায়েদ, কাবিল মোল্লা, বস্তির রাজা খ্যাত মোশাররফ হোসেন, ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী মনজিল হক, টারজান মিন্টু, শিপন কবির, বনানী থানা তাঁতীলীগ সভাপতি মোমিন, ও সেলিম অন্যতম। তারা মূলত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকা পকেটস্থ করেন। রাজনৈতিক আশীর্বাদ থাকায় প্রভাবশালীদের কারণে অনেক সময় পুলিশও এদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নানা উদ্যোগ নিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
এদের মধ্যে চাঁদাবাজি, ধর্ষন ও হত্যা চেষ্টা মামলায় বনানী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ফরিদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে কড়াইল বস্তির বেলতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ফরিদ খান জেলখানায় রয়েছেন। এঘটনায় ফরিদ খানকে বহিস্কারও করেছে বনানী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগ। তবে ফরিদ খানের স্থলে বনানী থানা শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাসির উদ্দিন মোল্লা নামক একজনকে। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসির উদ্দিন মোল্লাও কড়াইল বস্তির চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। সে আর ফরিদ একই পথের পথিক। এক সন্ত্রাসী ধরা পরেছে তার বদলে আরেক সন্ত্রাসীকে পদ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর, কড়াইল বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সিরাজ মন্ডলকে নারায়নগঞ্জের বন্দর থানাধীন মদনপুর এলাকা হতে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। সিরাজ মন্ডল বনানী থানার অন্তর্গত ২০নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। মাদকসহ গ্রেফতারের পর সোমবার (২৯ নভেম্বর) বনানী থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর-এর প্যাডে দপ্তর সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিস্কার করা হয়।

বনানী (ঢাকা) প্রতিনিধি: রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানীর পাশেই অপরাধীদের সবচেয়ে নিরাপদ আস্তানা কড়াইল বস্তি অস্ত্র-মাদক কেনাবেচা, নারী-শিশু পাচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণহীন সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছে। অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত কড়াইল মাদকেরও খোলামেলা হাট-বাজার। অবৈধভাবে বসতি, অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব কিছুই এখানে ব্যবহার হচ্ছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। বস্তির ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ থাকলেও মিটার নেই। একই অবস্থা গ্যাস ও পানির ক্ষেত্রেও। আর এসব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের কাছ থেকে অবৈধ ঘর ভাড়াসহ নানা সেবা দেওয়ার নামে মাসে অন্তত ১০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কড়াইল বস্তি থেকেই মাদকের পাইকারি চালান যাচ্ছে রাজধানীর সর্বত্র। এ বস্তিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বাহিনী, ভাড়াটে খুনি চক্র। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধে জড়িত এ বস্তির কয়েকটি চক্র। বছরের পর বছর ধরেই কড়াইল বস্তি সন্ত্রাসীদের অঘোষিত অভয়ারণ্যে পরিণত থাকলেও তাতে বাধ সাধতে পারেনি কেউ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশির দশক থেকেই সন্ত্রাসীদের আস্তানা এবং রাজধানীর অন্যতম মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত কড়াইল বস্তি উচ্ছেদে সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শত চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত বস্তিটি বহাল তবিয়তে আছে। এর দখল নিয়েও বহুবার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।এভাবেই টিকে আছে কড়াইল বস্তি। অভিযোগ রয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ২০টি গ্রুপের সদস্যরা কড়াইল বস্তি এবং পার্শ্ববর্তী লেক এলাকায় অবস্থান করে। বিভিন্ন স্থানে বসে বৈঠক। এসব বৈঠকেই ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরি এবং বাসাবাড়িতে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। বেশিরভাগই কড়াইল বস্তিতে আস্তানা গেড়েছে। বস্তিতে কিশোর সন্ত্রাসী বা বস্তির খুদে রাজা হিসেবে পরিচিত। অনেকের নামে হত্যা থেকে শুরু করে মাদক-ছিনতাই, চুরি, গাড়ি ভাঙচুর ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত কড়াইল বস্তি অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দিনের বেলায় কড়াইল বস্তির অবস্থা স্বাভাবিকই থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় এই চিত্র বদলে যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই বস্তিতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ে। বাড্ডা, কচুক্ষেত, খিলক্ষেত, ভাটারা, বেরাইদ, মহাখালী এবং তেজগাঁও এলাকার সন্ত্রাসীরা এই বস্তিতে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ে। এসব সন্ত্রাসী পুলিশ ও র‌্যাবের তালিকাভুক্ত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কড়াইল বস্তিতে পাইকারি মাদক সরবরাহের মহারাজ হয়ে উঠেছে বনানী থানা পুলিশের ড্রাইভার ও কথিত সোর্স শহীদ। ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানীর হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে গ্রেফতার হওয়া শহীদ পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন। এর আগে শহীদ ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া বনানী থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা গুলশান থানায় থাকাকালে তার সোর্স ও ড্রাইভার ছিল, তখন থেকেই কড়াইল বস্তির একাংশ নিজের দখলে নেন। সেখানেই এখন গড়ে উঠেছে তার অপ্রতিরোধ্য মাদক সাম্রাজ্য। ঢাকা উওর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মাদক স্পট এবং মাদক ব্যবসায়ী থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে শহীদ। যারা চাঁদা দেয় না তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

এদিকে নূরুল ইসলাম বস্তির ঝিলপাড়ে বসিয়েছে রমরমা জুয়ার আসর। রাত-দিন সেখানে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা চলে। এ ছাড়াও বিচার শালিসের নামে অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করতে আওয়ামী লীগের অফিস বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে টর্চার সেল।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে, বস্তির বেলতলা, বৌবাজার, জামাইবাজার, এরশাদনগর, টিএনটি বস্তি ও ঝিলপাড়ে ৩০ হাজার ঘর ও কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। প্রতি ঘরে একটি করে বাতি ধরলে তা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর বাইরে রয়েছে ফ্যান, এসি, ফ্রিজ ও টেলিভিশন। প্রতি বাতি, টিভি ও ফ্যানের জন্য এক পয়েন্ট ধরে ২০০ টাকা দিতে হয়। আর ফ্রিজ ও এসি চালালে ৫০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকাও নেওয়া হয়। সঙ্গে রয়েছে গ্যাস, পানি ও বাসা ভাড়া।

বস্তিবাসীর ভাষ্যমতে, তারা প্রতি ঘর আড়াই থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। বিভিন্ন ভাসমান ও স্থায়ী দোকান থেকে প্রতি মাসে ৮০ লাখ টাকা, তালতলা, বৌবাজার, জামাইবাজার ও এরশাদনগর মার্কেট থেকে তোলা হয় ১ কোটি টাকা, প্রতিটি ঘর থেকে ভাড়া বাবদ ৬ কোটি টাকা, গ্যাসের সংযোগ থেকে ৫০ লাখ, বিদ্যুৎ থেকে ৪০ লাখ এবং শুধু পানির সংযোগ থেকেই তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা। এতে টাকার অঙ্কে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বস্তি জুড়ে রয়েছে বিশাল চাঁদাবাজ চক্র। বস্তিতে দুটি চক্র সক্রিয়। এর মধ্যে ‘নান্দাইল গ্রুপ’ সবচেয়ে শক্তিশালী। এসব টাকা বিভিন্ন দফতরে দেওয়ার পর বাকি টাকা পকেটে ঢুকিয়ে অল্প দিনেই কোটিপতি বনে গেছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে বনানী থানা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ফরিদ খান, ইয়াকুব, ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী জোনায়েদ, কাবিল মোল্লা, বস্তির রাজা খ্যাত মোশাররফ হোসেন, ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী মনজিল হক, টারজান মিন্টু, শিপন কবির, বনানী থানা তাঁতীলীগ সভাপতি মোমিন, ও সেলিম অন্যতম। তারা মূলত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকা পকেটস্থ করেন। রাজনৈতিক আশীর্বাদ থাকায় প্রভাবশালীদের কারণে অনেক সময় পুলিশও এদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নানা উদ্যোগ নিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
এদের মধ্যে চাঁদাবাজি, ধর্ষন ও হত্যা চেষ্টা মামলায় বনানী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ফরিদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে কড়াইল বস্তির বেলতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ফরিদ খান জেলখানায় রয়েছেন। এঘটনায় ফরিদ খানকে বহিস্কারও করেছে বনানী থানা জাতীয় শ্রমিকলীগ। তবে ফরিদ খানের স্থলে বনানী থানা শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাসির উদ্দিন মোল্লা নামক একজনকে। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসির উদ্দিন মোল্লাও কড়াইল বস্তির চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। সে আর ফরিদ একই পথের পথিক। এক সন্ত্রাসী ধরা পরেছে তার বদলে আরেক সন্ত্রাসীকে পদ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর, কড়াইল বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সিরাজ মন্ডলকে নারায়নগঞ্জের বন্দর থানাধীন মদনপুর এলাকা হতে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। সিরাজ মন্ডল বনানী থানার অন্তর্গত ২০নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। মাদকসহ গ্রেফতারের পর সোমবার (২৯ নভেম্বর) বনানী থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর-এর প্যাডে দপ্তর সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিস্কার করা হয়।