ঢাকা : এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ‘বাংলাদেশেই সম্ভব’ বলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা, বিদেশে সুচিকিৎসা ও তাঁর স্থায়ী মুক্তির দাবিতে ড্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ড্যাব’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেছেন, বিএমএর এমন বিবৃতিতে চিকিৎসকদের শপথের ভঙ্গ হয়েছে।
ডা. হারুন বলেন, দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত। তারা বলেছেন, তাঁর (বেগম জিয়ার) চিকিৎসা দেশে আর সম্ভব না, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও না। তবে এর বিপক্ষে সরকার ও বিএমএর অবস্থান অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চিকিৎসক সমাজ হিসেবে একটা হিপোক্রেটিক শপথ নেই যে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কখনো মিথ্যা বলবো না, অন্যায় করবো না, রোগীর স্বার্থে সবসময় কাজ করবো। আজকে তারা (বিএমএ) সেই শপথ ভঙ্গ করেছে। অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আজকে বিএমএ অবস্থান নিয়েছে।
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, লিভার সিরোসিস, বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট পর্যন্ত হয় না। দুজনকে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছিল, তাদের একজন মারা গেছেন, আরেকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। আর এটা শুধু বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা করেননি, বিদেশ থেকে টিম এসে করেছিল। লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়, এটা ভুল তথ্য।সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব থেকে তথ্য না দিলে মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি ও গুজবের সৃষ্টি হয়, আপনারা কি গুজবের সুযোগ করে দিচ্ছেন কি না ?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডা. হারুন বলেন, সঠিক খবর কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরাই দিয়েছেন। যা বিশ্বাসযোগ্য। ড্যাব যদি সব তথ্য দেয় তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাই আমি মনে করি তারা সঠিক সময়ে মানুষের কাছে তথ্য প্রকাশ করেছেন। এখন সরকার এই ব্যপারে চাপও অনুভব করছে।বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলা হয়েছে এবং টিপসটা ভারতে করা যায় বলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাবনা জানতে চাইলে ড্যাব সভাপতি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য তো বাইরে থেকে চিকিৎসক আনা হয়েছিল, এরপরও তাকে কেন বাইরে নেওয়া হলো। কারণ চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তার সব বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে হার্টের অপারেশন হয়, এনজিও প্লাস্টিক হয়, এনজিওগ্রাম হয়। বাংলাদেশে হার্টের কাজ হয় না এমন কোনো কিছু নেই। তারপরও ওনাকে বিদেশে নেওয়া হলো।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জামার্নিতেও সব জায়গায় হয় না। এটা সম্পূর্ণ একটা টিম ওয়ার্ক। আমরা চিকিৎসক আনলাম, পরে দেখা গেল তিনি বলছেন যে আমি একা পারবো না। তাই আমরা মনে করছি, যারা বলছেন তার চিকিৎসা দেশে হতে পারে সেটা আসলেই ভুল।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব ডা: মো: আব্দুস সালাম বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের চিকিৎসকগণের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহ্বান, জরুরি ভিত্তিতে তার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিবেন।
Post Views: 548