বিশেষ প্রতিবেদক : ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বাংলাদেশ থেকে এশিয়া, এশিয়া থেকে বিশ্ব নেতাদের কাতারে শেখ হাসিনা । দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। বুঝতে পেরেছেন দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে শিক্ষার বিকল্প নাই। তাই শিক্ষাখাতে বাজেটও বৃদ্ধি করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চালাতে দুই জন মন্ত্রীও দিয়েছেন। একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রী নেতা ডা. দিপু মনি আর একজন চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী’র যোগ্যসন্তান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল । একজন রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনার দক্ষতা প্রশংসার দাবীদার ।
চট্টগ্রামের সন্তান নওফেল চৌধুরীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন মাত্র কয়েক জন দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা । ফুল দিয়ে যারা তলোয়ার চালাতে পারে ইতিহাসে তাদের নাম মীর জাফর, এজিদ, ঘসেটি বেগমের পাশে লেখা। বাঙালী জাতিকে বিজ্ঞানময় সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের উপর আস্তা রেখেছেন তারা কি সঠিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রিত অধীনস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর রেখেছেন ? নাকি বড় বড় সাইনবোর্ড ফুলেল শুভেচ্ছা আর প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেছি বেমালুম সব ভুলে গেছেন ? চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে টাকা খাচ্ছেন। সেই হদিস কি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আছে ?
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা কোভিড-১৯। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা সরকারের নির্দেশ মতে পাঠদান শেষ করেছে । ঘরে বসে ইর্ন্টারনেটে এই পাঠদান একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কারণেই সম্ভব হয়েছে ।
কোভিড-১৯ করোনাকালীন সময় ২০২০ সাল। সরকার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২০সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দিয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল সাংবাদিক ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা সম্ভবপর হয়নি। উক্ত অটো ফলাফল ইর্ন্টারনেট প্রকাশ করেছিল সরকার। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল সকল সাংবাদিক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে পত্রিকা ও ওয়েবপোর্টালে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সাংবাদিকদের আপ্যায়নের নামে ৫০ হাজার টাকার বিল করেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ এর অফিস সহায়ক আসাদুর মোল্লা নামে অফিস থেকে অগ্রিম গ্রহণ করে লোপাট করে নিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ ।
২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সময় সাংবাদিকদের আপ্যায়ন খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকার বিষয়ে ডিডি এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজী নয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ৫টি শাখা। সংস্থাপন শাখা, পরীক্ষা শাখা, কলেজ শাখা, বিদ্যালয় শাখা ও হিসাব শাখা। ২০২০ সালের হিসাব মতে এই পাঁচটি শাখায় মোট ৭০(সত্তর)টির মত কম্পিউটার আছে। এই পাঁচটি শাখার মধ্যে বিদ্যালয় ও পরীক্ষা শাখায় ১৬টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়। তার মধ্যে বিদ্যালয় শাখায় ৮টি এবং পরীক্ষা ৮ টি মোট ১৬ টি কম্পিউটার নষ্ট হয় বলে দেখিয়েছে। আর বাকি সংস্থাপন, কলেজ ও হিসাব শাখায় কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়নি।
কম্পিউটার মেরামতের নামে বিদ্যালয় ও পরীক্ষা শাখার ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দিয়ে জোর করে আবেদন করিয়ে প্রতি জনের নামে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে অগ্রিম তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কম্পিউটার খারাপও হয়নি মেরামতও করেনি।
এই কম্পিউটার মেরামত বাবদ অগ্রিম ২৫ হাজার টাকা করে ১৬ জনের নামে মোট ৪লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার নারায়ণ নাথ।
এই বিষয়ে একজন কম্পিউটার বিশেজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছি। তিনি বলেন, কম্পিউটার খারাপ বা নষ্ট হতে পারে কিন্তু মাত্র দুইটি শাখায় নষ্ট হয়েছে বাকি শাখায় নষ্ট বা খারাপ হয়নি। এখানে ও দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যায়।
কম্পিউটার শাখার ৩টি ইউপিসি কেনার জন্য দরপত্র আহবান করেছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড । দরপত্র অনুযায়ী এক কোম্পানী একটা ইউপিসি ৬২হাজার টাকা করে কোটেশান দিয়েছিল। সেই কোম্পানীকে কোটেশান ফেরত দিয়ে পূনঃরায় ১ লক্ষ,২৬ হাজার টাকা করে কোটেশান করে ইউপিএস কিনেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের উপ-সচিব বেলাল আহমদ।
এই বিষয়ে উপ-সচিব বেলাল আহমদের সাথে ফোনে জানতে চাইলে তিনি দি ক্রাইমকে বলেন, যা বলার সচিব মহোদয়কে বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার উনি বলবেন। এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য বা বক্তব্য নাই।
করোনাকালীন ২০২০ সালের যারা জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তারা সবাই সরকারের বিধি মোতাবেক অনলাইনে রেজিষ্ট্রোশন করেছিল। সেই রেজিষ্ট্রাশন মোতাবেক সরকার করোনাকালীন বা কোভিড-১৯ এর কারণে চট্টগ্রাম বোর্ডসহ বাংলাদেশের সকল বোর্ডের আওতাধীন সকল ছাত্র/ছাত্রীকে অটো পাস করে দিয়েছিল এবং তাদের রেজিষ্ট্রাশন কার্ড ও সনদ দিয়েছে। আর যারা রেজিষ্ট্রাশন করেনি তাদের পাস করিয়ে দেননি। এটা স্বাভাবিক বিধি-বিধান। যারা ২০২০ সালে অনলাইনে রেজিষ্ট্রাশন করেনি সেই রকম ২০২০ সালে পরীক্ষার্থী ৩৯ জন ছাত্র/ছাত্রীকে গত ২৮/১০/২০২১ইং বৃহস্পতিবার তাদের রেজিষ্ট্রাশন করিয়ে টাকা বিনিময়ে সনদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এক সুত্রে জানা গেছে, প্রতি জন ছাত্র/ছাত্রী থেকে ১ লক্ষ,৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা করে নিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিফ্লব গাঙ্গুলী এবং চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসার প্রদীপ চক্রবর্ত্তী। এখানে আনুমানিক সনদ বিক্রি বাবদ ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
যে সকল স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা বিনিময়ে জেএসসি সনদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- ষোল শহর পাবলিক স্কুলে ২জন, বঙ্গবন্ধু বিদ্যালয় কাট্টলি ২জন, রাবেতা মডেল হাই স্কুল রাঙ্গামাটি ২জন।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দি ক্রাইমকে বলেন, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। যদি কোন অভিযোগ আসে তাহলে খতিয়ে দেখব। যারাই দুর্নীতির সাথে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্কুল পরিদর্শনের সময় বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলীকে নাকি মোটা অঙ্কেরও টাকা দিতে হয়। তা না হলে নানা ধরণের হয়রানি করে থাকে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড এখন দুর্নীতির আখড়া । দেখার বা বলার যেন কেউ নাই । প্রতি রন্ধে রন্ধে এখানে দুর্নীতি। এখানে ভুল সংশোধনী থেকে শুরু করে সবখানে দুর্নীতি ছাড়া কোন কাজই নাকি হয় না। এই বিষয়ে ভালভাবে তদন্ত করলে আসল কথা বা দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে।
শিক্ষা থেকে দুর্নীতি এটা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় অনেক বার প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা হয়নি বলে দুর্নীতিবাজেরা পারপেয়ে যাচ্ছে ।
এই বিষয়ে সাধারণ জনগণ হতে শুরু করে সচেতন মহল সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।